পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হইত। বাবা, বাবা, বলিয়া লীলা অজ্ঞান! বলা বাহুল্য যে, মেয়েটিকে গিরিশ প্ৰাণের অধিক ভালবাসিতেন। গিরিশের ধন-এশ্বৰ্য ছিল না বটে; কিন্তু লীলার কথা, লীলার হাসি, লীলার ভালবাসা, তাঁহার লক্ষ টাকার অধিক ছিল। ফলকথা, গিরিশের সংসারে শান্তি ছিল, সুখ ছিল। কিন্তু, হায়! লীলার যখন বয়স পাঁচ বৎসর হইল, তখন এই সুখের সংসারে এক ঘোর দুর্ঘটনা ঘটিল। এই সময় গিরিশের ভয়ানক কাসি হইল, রাত্রিদিন কাসি, এক মুহুর্তের জন্য বিরাম নাই, বক্ষঃস্থল যেন খানখান হইয়া ভাঙ্গিয়া যাইতে লাগিল। শ্লেষ্মার সহিত ক্রমে ঈষৎ রক্ত দেখা দিল। প্রত্যহ বৈকালবেলা অল্প অল্প জুর হইতে লাগিল। গিরিশ নিজে ডাক্তার ছিলেন। কি হইতেছে, তাহা তিনি সহজেই বুঝিতে পারিলেন। যক্ষ্মী-কাস রোগ দ্বারাই তিনি আক্রান্ত হইলেন। গিরিশ ভাবিলেন যে, আর আমার নিস্তার নাই। ক্রমে তিনি শুষ্ক ও দুৰ্ব্বল হইয়া পড়িতে লাগিলেন। শ্বশুর, শাশুড়ী, স্ত্রী ও কন্যার মুখপানে চাহিয়া তিনি যতদিন পারিলেন, সংসারনিক্যর্বাহের নিমিত্ত অৰ্থেপাৰ্জ্জন করিতে লাগিলেন। নিতান্ত অশক্ত হইয়াও তিনি যথাশক্তি পরিশ্রম করিতে লাগিলেন। পীড়া ক্রমেই বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। এরূপ সঙ্কট সাংঘাতিক পীড়াগ্রস্ত হইয়া লোকে আর কতদিন পরিশ্রম করিতে পারে। ছয় মাস পরেই তিনি শয্যাগত হইয়া পড়িলেন। গিরিশের সঞ্চিত অর্থ ছিল না। মাসে মাসে যাহা উপাৰ্জ্জন করিতেন, তাহাই খরচ হইয়া যাইত। স্ত্রী ও কন্যাকে যে কয়খানি গহনা দিয়াছিলেন, সম্বলের মধ্যে কেবল তাহাঁই ছিল। শয্যাশায়ী হইয়া, নিরুপায় হইয়া, গিরিশ এখন সেই লি বেচিয়া অতিকষ্টে দিনপাত করিতে লাগিলেন । (C) রোগ আরও প্রবল হইয়া উঠিল। দিন দিন তিনিবিছানার সহিত মিশিয়া যাইতে লাগিলেন। গিরিশ বুঝিলেন যে, তাঁহার আসন্নকােল উপস্থিতঁ। আর অধিক বিলম্ব নাই। অবশিষ্ট যে অলঙ্কার ছিল, তাহা বিক্রয় করিয়া পঞ্চাশ টাকা গিরিশের এই শেষ সম্বল। কিন্তু এ পঞ্চাশ টাকা কয়দিন? এ পঞ্চাশ টাকা ফুরাইলে পর কি হইবে? বৃদ্ধ ও রুগ্ন শ্বশুর ও বৃদ্ধা শাশুড়ীর দশা কি হইবে? সহায়সম্পত্তিহীনা স্কুলের কুলবধু সরলার দশা কি হইবে? প্ৰাণাধিক শিশু লীলার কি হইবে? আহা! সংসারের সে কিছুই জানে না। সদাই মনের আনন্দে সে হাসিয়াখেলিয়া বেড়ায়। হায়! দুই দিন পরে সে লীলার কি দশা ঘটিবে? ক্ষুধায় কাতর হইয়া দুইটি মুড়ির জন্য কি একমুষ্টি ভাতের জন্য লীলা যখন কাঁদিবে, তখন কে দুইটি মুড়ি কি একমুষ্টি ভাত দিয়া তাহাকে শান্ত করিবে? গিরিশ ভাবিয়া আকুল হইলেন, চারিদিক তিনি অন্ধকার দেখিতে লাগিলেন। হে ভগবান! তোমার মনে কি এই ছিল! গিরিশ অনেকদিন ধরিয়া ফণ্ডে টাকা দিয়া আসিতেছেন। ফণ্ডের সহিত তিনি এই নিয়ম করিয়াছিলেন যে, তাঁহার মৃত্যু হইলেই, তাহার স্ত্রী নগদ তিন হাজার ও মাসে দশ টাকা পাইবেন। তবে আর ভাবনা কি? সত্য বটে। কিন্তু এক ফণ্ডে মাসে তাঁহাকে তিন টাকা করিয়া দিতে হয়। শয্যাগত হইয়াও অতিকষ্টে তিনি তাহা দিয়া আসিতেছেন। এখন আর তিনি কি করিয়া দিবেন? তাহার পর অপর ফণ্ডে ছয় মাস অন্তর যে পঞ্চাশ টাকা করিয়া দিতে হয়, পাচ দিন পরে সেই পঞ্চাশ টাকা দিতে হইবে। এখন কোথা হইতে সে পঞ্চাশ টাকা তিনি দিবেন? নিয়মিত দিনে টাকা দিতে না পারিলে, নিরূপিত প্ৰাপ্য হইতে তাঁহার পরিবার বঞ্চিত হইবেন। এতদিন তিনি যে ফণ্ডে টাকা দিয়া আসিতেছেন, সে বৃথা হইবে, তাঁহার পরলোকপ্ৰাপ্তি হইলে, স্ত্রী একটি পয়সাও পাইবে না। যে পঞ্চাশটি টাকা হাতে আছে, তাহার সেই শেষ সম্বল। তাহা &)brቲr দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com%ি"*************