পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেখিতে পাও না?”

 তনু রায় বলিলেন,— “কে বল না শুনি?”

 স্ত্রী উত্তর করিলেন,— “কেন খেতু?”

 তনু রায় বলিলেন,— “তা কি কখনও হয়?

 বিষয় নাই, বন্ধু নাই, বান্ধব নাই; এরূপ পাত্রে আমি কঙ্কাবতীকে কি করিয়া দিই। ভাল, আমি না হয় কিছু না লইলাম, মেয়েটি যাহাতে সুখে থাকে, দু’খানা গহনা-গাঁটি পরিতে পায়, তা তো আমাকে করিতে হইবে?”

 তনু রায়ের স্ত্রী উত্তর করিলেন,— “খেতুর কি কখনও ভাল হইবে না? তুমি নিজেই না বল যে 'খেতু ছেলেটি ভাল, খেতু দু’পয়সা আনিতে পরিবে?' যদি কপালে থাকে তো খেতু হইতেই কঙ্কাবতী কত গহনা পরিবে। কিন্তু, গহনা হউক আর না হউক, ছেলেটি ভাল হয়, এই আমার মনের বাসনা। খেতুর মত ছেলে পৃথিবী খুঁজিয়া কোথায় পাইবে, বল দেখি? মা কঙ্কাবতী আমার যেমন লক্ষ্মী, খেতু তেমনি দুর্লভ সুপাত্র। এক বোঁটায় দুইটি ফুল সাধ করিয়া বিধাতা যেন গড়িয়াছেন!"

 তনু রায় বলিলেন,— “ভাল, সে কথা তখন পরে বুঝা যাইবে। এখন তাড়াতাড়ি কিছু নাই।”

 আরও কিছুদিন গত হইল। কলিকাতা হইতে খেতুর মা’র নিকট একখানি চিঠি আসিল। সেই চিঠিখানি তিনি তনু রায়কে দিয়া পড়াইলেন। পত্রখানি রামহরি লিখিয়াছিলেন। তাহার মর্ম্ম এই—

 “খেতুর বিবাহের জন্য অনেক লোক আমার নিকট আসিতেছেন। আমাকে তাহারা বড়ই ব্যস্ত করিয়াছেন। আমার ইচ্ছা যে, লেখাপড়া সমাপ্ত হইলে, তাহার পর খেতুর বিবাহ দিই। কিন্তু কন্যাদায়গ্রস্ত ব্যক্তিগণ সে কথা শুনিবেন কেন? তাঁহারা বলেন, কথা স্থির হইয়া থাকুক, বিবাহ না হয় পরে হইবে। আমি অনেকগুলি কন্যা দেখিয়াছি। তাহাদিগের মধ্যে জন্মেজয়বাবুর কন্যা আমার মনোনীত হইয়াছে। কন্যাটি সুন্দরী, ধীর ও শান্ত। বংশ সৎ, কোনও দোষ নাই। মাতা-পিতা, ভাই-ভগিনী বর্ত্তমান। কন্যার পিতা সঙ্গতিপন্ন লোক। কন্যাকে নানা অলঙ্কার ও জামাতাকে নানা ধন দিয়া বিবাহ কার্য্য সমাধা করিবেন। এক্ষণে আপনার কি মত জানিতে পারিলে কন্যার পিতাকে আমি সঠিক কথা দিব।”

 পত্রখানি পড়িয়া তনু রায় অবাক। দুঃখী বলিয়া যে খেতুকে তিনি কন্যা দিতে অস্বীকার, আজ নানা ধন দিয়া সেই খেতুকে জামাতা করিবার নিমিত্ত লোকে আরাধনা করিতেছে।

 খেতুর মা রামহরিকে উত্তর লিখিলেন,— “আমি স্ত্রীলোক, আমাকে আবার জিজ্ঞাসা কর কেন? তুমি যাহা করিবে, তাহাই হইবে। তবে আমার মনে একটি বাসনা ছিল, যখন দেখিতেছি, সে বাসনা পূর্ণ হইবার নহে, তখন সে কথায় আর আবশ্যক নাই।”

 এই পত্র পাইয়া, রামহরি খেতুকে সকল কথা বলিলেন, আর এ বিষয়ে খেতুর কি মত, তাহা জিজ্ঞাসা করিলেন।

 খেতু বলিলেন,— “দাদা মহাশয়! মা’র মনের বাসনা কি, তাহা আমি বুঝিয়াছি। যতদিন মা’র সাধ পূর্ণ হইবার কিছুমাত্রও আশা থাকিবে, ততদিন কোনও স্থানে আপনি কথা দিবেন না।”

 রামহরি বলিলেন,— “হাঁ, তাহাই উচিত। তোমার বিবাহ বিষয়ে আমি এক্ষণে কোন স্থানে কথা দিব না।”

 খেতুর অন্য স্থানে বিবাহ হইবে, এই কথা শুনিয়া কঙ্কাবতীর মা একেবারে শরীর ঢালিয়া

২৮
ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ