পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ বিমলা যে কন্যাকে হারাধন স্বপ্নে দেখিয়াছিলেন, যাহার সহিত তাহার হাওড়া ষ্টেশনে সাক্ষাৎ হইয়াছিল, যাহার হাত হইতে আংটি আসিয়া হারাধনের অঙ্গুলিতে লাগিয়া গিয়াছিল,— সেই কন্যার নাম বিমলা। তাঁহার পিতার নাম রমানাথ চট্টোপাধ্যায়, নিবাস শ্ৰীরামপুরের নিকট একখানি গ্রামে। কন্যার বিবাহে ইহাদের অনেক টাকা খরচ হয়। কিন্তু রমানাথ দরিদ্র। কন্যাদায়ে রমানাথ বিপন্ন হইলেন। কেবল বিমলা নয়, তাহার আর একটি ছোট কন্যা ছিল, তাহার নাম কমলা। অনেক কষ্টে রমানাথ এক স্থানে বিমলার বিবাহের সম্বন্ধ করিলেন, কিন্তু কি কারণে সে সম্বন্ধ ভাঙ্গিয়া গেল। দেখিতে দেখিতে বিমলা দ্বাদশ বৎসর পদার্পণ করিল; যৌবন অঙ্কুরিত হইল। পিতার ঘোর দুর্ভাবনা উপস্থিত হইল। কিছুদিন পরে আর এক স্থানে সম্বন্ধ স্থির হইল; কিন্তু দৈবক্রমে তাহাও ভাঙ্গিয়া গেল। পুনরায় তৃতীয় স্থানে স্থির হইল; সব ঠিকঠাক, বিবাহের দিন পৰ্যন্ত নির্দিষ্ট হইল, কিন্তু বিবাহের পূর্বদিন ভাবী জামাতা বিসূচিকা রোগে হঠাৎ কালগ্ৰাসে পতিত হইলেন। বিমলা-বিষয়ে একটি দুর্নােম রটল। “ঐ যে অপূৰ্ব্ব অলৌকিক রূপ, উহা ভাল লক্ষণ নহে, বিধবা হইবার লক্ষণ । ঘরে এত রূপ কেন?” ফলকথা, বিমলা বড় অপয়া মেয়ে—চারিদিকে এইরূপ জনরব। । সেই দিন হইতে পিতা আর কোন স্থানে তাহার বিবাহ স্থির করিতে পারিলেনুপ্তর্ষিস সেই অপয়া কন্যার সহিত কেহই আপনার পুত্রের বিবাহ দিতে সম্মত হইল না। এই সময়ে বিমলাদের বাড়ী কোথা হইতে সন্ন্যাসী আসিয়া অতিথি হইয়াছিলেন। বিমলার পিতা দুঃখী হইলেও সাধুসঙ্গ ভূঙ্গিলবাসিতেন; যথাসাধ্য সাধুসন্ন্যাসীর পরিচর্য্যা করিতেন। সপরিবার শ্রদ্ধাযুক্ত হইয়া, তিটি সেই সন্ন্যাসীর সেবা করিলেন। অপরাহে, বিমলার মাতা কন্যার হাত ধরিয়া সন্ন্যাসীর র্সম্মুখে উপস্থিত হইলেন ও বলিলেন, — “বাবা, আমার এ কন্যাটির কি কখন বিবাহ হইবে না?” সন্ন্যাসী, বিমলার আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিয়া উত্তর করিলেন, — “তোমার এ কন্যাটির ভাল ঘরেই বিবাহ হইবে, তবে ফুল ফুটিতে এখনও বিলম্ব আছে। যে ঘরে বিবাহ হইবে, সে ঘরে তোমাদের কন্যা সহজে পড়ে না। সৰ্ব্বস্ব বেচিয়া দিলেও সে সুপােত্র কিছুতেই তোমরা লাভ করিতে পরিবে না। কিন্তু আমি এই অঙ্গুরীটি তোমার কন্যাকে দিলাম। বামহস্তে সে ইহা ধারণ করবে। ইহার ভিতর আংটিাবীর আছেন। সেই আংটিাবীরের প্রসাদে ও তাঁহার তাড়নায় তোমার কন্যা সেই সুপাত্র লাভ করিবেন!" আংটি প্রদান করিয়া সন্ন্যাসী প্ৰস্থান করিলেন। যেদিন বিমলা আংটি ধারণ করিল, সেইদিন হারাধনের মুখশ্ৰী চিন্তাপথে উদিত হইয়া, তাহার মানসপটে অঙ্কিত হইল। সেই রাত্ৰিতে সে হারাধনকে পুনরায় স্বপ্লজগতে দর্শন করিল। বিমলা স্বপ্নে দেখিল যে, তাহার বিবাহের নিমিত্ত পিতা স্বয়ম্বরসভা আহবান করিয়াছেন। রাজগণ ঘটের মত সারি সারি বসিয়া আছেন। মাল্যচন্দন লইয়া যখন সে বাহির হইল, তখন “আমাকে দাও, আমাকে দাও"। বলিয়া একটা চীৎকার পড়িয়া গেল। একপার্শ্বে মলিনবদনে মানসকল্পিত সেই ব্ৰাহ্মণযুবক বসিয়াছিলেন। বিমলা তাঁহার গলায় মাল্য প্ৰদান করিল। ঘোর কোলাহল উপস্থিত হইল। সেই কোলাহলে বিমলার নিদ্রাভঙ্গ হইল। বলা বাহুল্য যে, ঠিক সেই রাত্রিতে হারাধনও মানস-ক্ষেত্রে বিমলাকে প্ৰথম দৰ্শন করিয়াছিলেন ও

  • |-ձյթ]] 8o0

sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro