পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাহার উপর বেণী ও মিহিরের পুস্তক, কাগজ-কলম ইত্যাদি থাকিত। মিহিরের বড় একখানি ছুরি ছিল। ছুরিখানি সৰ্ব্বদাই এই মেজের উপর পড়িয়া থাকিত। অন্ধকারে বেণীর সহিত জড়ােজড়ি করিতে করিতে ক্রমে আমি সেই মেজের উপর গিয়া পড়িলাম। দৈবের ঘটনা! আমার দক্ষিণ হাতটি মেজেস্থিত ঠিক সেই ছুরির উপর পড়িল। তখনও বেণী আমাকে সবলে ধরিয়াছিল। তাহাকে যে খুন করিব, সে ইচ্ছা আমার আন্দীে ছিল না। কিন্তু কোনরূপে তাহার হাত হইতে নিভৃতি না পাইয়া, আমি সেই ছুরি তাহার বুকে মারিয়া বসিলাম। “বাপ’! বলিয়া বেণী তৎক্ষণাৎ ভূতলে পতিত হইল। আমি পলায়ন করিয়া আপনার ঘরে প্রবেশ করিলাম। হায় হায়! এক মিনিট পূৰ্ব্বে আমি একজন সাধু সচ্চরিত্রবান যুবক ছিলাম। এক মিনিটের মধ্যে আমি চাের, খুনে, নরপিশাচ হইয়া পড়িলাম। কিছুক্ষণ পরে মিহির ঘরে প্রবেশ করিল। ঘরে প্রবেশ করিয়া সে চীৎকার করিয়া উঠিল। আমি তৎক্ষণাৎ তাহার ঘরে গিয়া আলো জুলিয়া দেখিলাম যে, বেণী মৃতপ্রায় হইয়াছে, তাহাকে তুলিতে গিয়া মিহিরের শরীর ও কাপড় রক্তে আরক্ত হইয়া গিয়াছে ও সেই স্থানে মিহিরের ছুরি পড়িয়া আছে। ইহা ব্যতীত সেইদিন বৈকালবেলা বেণী ও মিহিরের কিছু বাচসা হইয়াছিল। আমি মনে করিলাম,-ভাল হইয়াছে। এ দোষ সম্পূর্ণরূপে মিহিরের উপর আরোপিত হইতে পরিবে, আর তাহা হইলে আমাকে কেহ সন্দেহ করিবে না। এইরূপ ভাবিয়া, তৎক্ষণাৎ পলায়ন করিবার নিমিত্ত মিহিরকে আমি পরামর্শ দিলাম। মিহির সে সময় স্তম্ভিত হইয়া গিয়াছিল। সে আমার কথামত কাৰ্য্য করিল। আমার একখানা কাপড় পরিধান করিয়া সে পলায়ন করিল। তাহার পলায়ন, তাহার পরিত্যক্ত রক্তাক্ত কাপড়, তাহার সকল দেখিয়া ও শুনিয়া পুলিশ তাহাকেই দােষী বলিয়া স্থির করিল, অন্য কাহাকেও করিল না। সে খুনের প্রকৃত বিবরণ এই আমি আপনাকে বলিলাম।” ஜூ আমার আফিস-গমন ঘুরিয়া গেল। আমি বলিলাম,- “এ রোগে আপনার মৃত্যু নিশ্চয়, তাহার অধিক বিলম্বও নাই। শুঞ্জ হউক, কাল হউক, পরশ্ব হউক, শীঘ্রই আপনাকে ঈশ্বরের নিকট দাড়াইতে হইবে। নিজের এরূপ গুরুতর অপরাধ অন্যের ঘাড়ে দিয়া কোন মুখে আপনি ঈশ্বরের নিকট দাড়াইবেন? অতএব যদি সময় থাকিতে যথার্থই আপনি পাপের প্ৰায়শ্চিত্ত করিতে ইচ্ছা করেন, তাহা হইলে এ সকল কথা কেবল আমাকে বলিলে হইবে না।” বেচু জিজ্ঞাসা করিল,— “আমাকে আর কি করিতে বলেন?” আমি উত্তর করিলাম— “এ সকল কথা আপনাকে পুলিশের নিকট বলিতে হইবে।” বেচু বলিল,— “তবে শীঘ্ৰ পুলিশের লোককে আপনি ডাকিয়া আনুন। আমার পিতা প্রত্যাগমন করিতে না করিতে আপনি এ কাজ করুন। আমি যে বেণীকে খুন করিয়াছি, তাহা তিনি জানেন না; একথা শুনিলে তিনি আমাকে কিছুতেই বলিতে দিবেন না।” আমি তৎক্ষণাৎ থানায় দৌড়িয়া যাইলাম। থানার লোক আসিয়া নিয়োগী-পুত্রের সমুদয় বিবরণ লিখিয়া লইল । তাহার পর, পুলিশের কৰ্ম্মচারী তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল,— “বেণীর নিকট হইতে যে নোট তুমি লইয়াছিলে, তাহা কি তুমি খরচ করিয়া ফেলিয়াছ? "নিয়োগী-পুত্র উত্তর করিল- “একখানি পঞ্চাশ টাকার ও পাঁচখানি দশ টাকার নোট ছিল। দশ টাকার পাঁচখানি নোটা ভাঙ্গাইয়া আমি খরচ করিয়াছি; কিন্তু পঞ্চাশ টাকার নােটখানি নম্বরী বলিয়া তাহা ভাঙ্গাইতে আমি সাহস করি নাই। সে নোট এখনও আমার নিকট আছে।” এই বলিয়া বেচু তাহার তেরঙ্গের চাবি আমাকে দিল ও যে কোণে নোটখানি ছিল, তাহা 8 issils -i-, g3, set - www.amarboicomf:5'"