পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমাকে প্ৰদক্ষিণ করিয়া নাচিতে লাগিলেন। এত বেগে তিনি আমার চারিদিকে ঘুরিতে লাগিলেন যে, তিনি যেন সৰ্ব্বদাই এক স্থানে দাঁড়াইয়া আছেন, আমার এইরূপ বোধ হইল। দারুণ নৃত্যে, দারুণ কোলাহলে, আমার মস্তিষ্ক দধি-মন্থনের ন্যায় যেন মস্থিত হইল। ঘোর বেদনায় আমার মস্তক যেন খসিয়া পড়িতে লাগিল। এই সময় মুণ্ডমালার হস্ত দুইটি ভূমিকম্পের মস্তক ধরিয়া আমার দিকে কিছু অবনত করিল। শঙ্খের একদিক ভূমিকম্পের মুখে রহিল, শঙ্খের পশ্চাৎদিক আমার বক্ষঃস্থল ঈষৎ স্পর্শ করিল। এই সময় ভূমিকম্প-মহাশয় শঙ্খে সবলে ফু দিলেন। এই সময় মুণ্ডমালার হস্ত দুইটি আমাকে ছাড়িয়া দিল। শঙ্খের পশ্চাৎদিক হইতে প্ৰবল ঝটিকার ন্যায় বায়ু নিৰ্গত হইয়া আমার বক্ষঃস্থলে লাগিল। সেই প্ৰবল বায়ুবেগে আমার শরীর মন্দিরের দ্বার পার হইয়া আকাশ-পথে চলিতে লাগিল! নিমেষের মধ্যে সহস্ৰ সহস্ৰ ক্রোশ পথ অতিক্রম করিয়া শূন্যপথে আমার শরীর প্রবলবেগে ছুটিতে লাগিল । নদ-নদী, বন-উপবন, পাহাড়-পৰ্ব্বত, সাগর-মহাসাগরের উপর দিয়া আমার শরীর শূন্যপথে ছুটিতে লাগিল। দুই-চারি মুহূৰ্ত্তের মধ্যে আমার শরীর সাতবার পৃথিবী প্ৰদক্ষিণ করিল। সে দারুণ বেগে জ্ঞান-গোচর আর আমার কিছুমাত্র রহিল না। অবশেষে বুপ্ত করিয়া আমি ভূমিতে পতিত হইলাম। ভূমিতে পতিত হইবার পূৰ্ব্বে আমি চক্ষু মুদিত করিয়াছিলাম। ভূমিতে পতিত হইয়াও আমি চক্ষু মুদিত করিয়া রহিলাম। মনে করিলাম যে, আমি আর জীবিত নাই, আমার হস্ত-পদ অস্থিমজ্জা সমুদয় চূর্ণ-বিচূর্ণ হইয়া গিয়াছে। যাহা হউক, কিছুক্ষণ পরে আস্তে আস্তে আমি চক্ষুগীহয়া দেখিলাম। প্রথম আমি আমার মাথায় হাত দিয়া দেখিলাম। দেখিলাম যে, মস্তকুর্টি চুৰ্ণ হইয়া ধূলার ন্যায় হইয়া যায় নাই। তাহার পর হাত দুইখানি দেখিলাম, দেখিলায%য, হাত দুইখানিও যেমন তেমনি আছে, তবে কৃশ হইয়া গিয়াছে। তাহার পর পদদ্বয়ুৰ্বোিড়য়া-চাড়িয়া দেখিলাম। তাহাও ভগ্ন বলিয়া বােধ হইল না। অবশেষে কোথায় কোনুষ্ট্রের্শৈ আমি নিক্ষিপ্ত হইয়াছি, তাহা স্থির করিবার নিমিত্ত ঘোরতর বিস্মিত হইলাম। আমি দেখিলাম যে, পাহাড়-পৰ্ব্বত অথবা সাগর-মহাসাগরের উপর আমার শরীর পতিত হয় নাই, ঘরের ভিতর, তক্তপোষে, বিছানার উপর আমার শরীর পতিত হইয়াছে। অন্ততঃ চক্ষু চাহিয়া আমি দেখিলাম যে, ঘরের ভিতর তক্তপোষের উপর আমি শয়ন করিয়া আছি, আর আমার পদতলে সেই তক্তপোষের উপর, একজন স্ত্রীলোক বসিয়া আছেন। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ আমার কথাটি ফুরুলো সেই স্ত্রীলোককে দেখিয়া আমার বড় ভয় হইল। আমি ভাবিলাম যে, সেই নারিকেল-মুখী বুঝি সঙ্গে সঙ্গে আসিয়াছে। অতি ধীরে ধীরে আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,- “কে ও! নারিকেলামুখী?” 8. দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comৰ্ম্মিািক্যনাথ রচনা সংগ্ৰহ