পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জিজ্ঞাসা করিয়া নরোত্তমকে সে চিৎ করিতে চেষ্টা করিল। নরোত্তম জোরে বালিশ ধরিয়া इश्लि। যাদবের দৃষ্টি দেয়ালের দিকে পড়িল। অনেক কষ্টে বহুদিন হইতে এক আধা পয়সা রাখিয়া নরোত্তম সাড়ে তিন টাকা সঞ্চয় করিয়াছিল। দুই দিন পূৰ্ব্বে সেই টাকা দিয়া নরোত্তম একটি ঘড়ি ও একটি গিলটির চেন কিনিয়াছিল। স্কুলে ঘড়িটি বড় বাহির করিত না; কিন্তু বাড়ীতে ও পথে ঘড়ি বাহির করিয়া পাঁচ মিনিট অন্তর সে সময় দেখিত। দুই বন্ধুতে আজ দুই দিন ঘড়ির আমোদে উন্মত্তপ্রায় হইয়াছিল। সম্মুখ দিকে সময় দেখা, পশ্চাৎ দিক খুলিয়া কল দেখা, ঘড়ির গল্প করা, ইহা ভিন্ন আজ দুই দিন দুই বন্ধুর অন্য কাজ ছিল না। নিজের বিছানার নিকট দেয়ালের গায়ে নরোত্তম ছোট একটি পেরেক পুতিয়াছিল। রাত্রিকালে ঘড়িটি সেই পেরেকে সে বুলাইয়া রাখিত। যাদব জিজ্ঞাসা করিল,- “তোমার ঘড়ি কোথায়? তোমার কাছে আছে? ঘড়ি কাছে রাখিয়া শুইও না, চাপ পাইলে ভাঙ্গিয়া যাইবে। দাও পেরেকে রাখিয়া দিই।” নরোত্তমের শোক এইবার উথলিয়া পড়িল। অতি দুঃখের সহিত সে কাঁদিতে লাগিল। যেন তাহার বুক ফাটিয়া যাইতেছিল। একটু সুস্থ হইয়া কাঁদিতে কাঁদিতে নরোত্তম বলিল,—“বৈকাল বেলা আমি বেড়াইতে গিয়াছিলাম। ঘড়ি বাহির করিয়া মাঝে মাঝে সময় দেখিতেছিলাম। একবার যেই বাহির করিয়াছি, আর কোথা হইতে অকস্মাৎ একটা লোক আধিয়া আমার হাত হইতে ঘড়ি কড়িয়া লাইল ও দ্রুতবেগে পলায়ন করিল। আমি তাহার পশ্চাৎ দীেড়িলাম; কিন্তু কিছুতেই তাহাকে ধরিতে পারিলাম না।” C এই কথা শুনিয়া যাদব কিছুক্ষণ চুপ রহিল। তাহার পর সেই ঘড়ি-চোর দেখিতে কিরূপ, তাহা জিজ্ঞাসা করিল। যতদূর ঘড়ি-চোরের রূপ বর্ণনা করিল। যাদব বলিল,— “তুমি কাদিও প্ৰাতঃকালে আমি সেই লোকটার সন্ধানে বাহির হইব। যেখানে পাই, তাহাকে ধরিয়া তোমার ঘড়ি আনিয়া দিব।” যাদবের একটি শালিক পাখী ছিল। একবার দেশে গিয়া যাদব পাখীর ছানাটি আনিয়াছিল। অতি শৈশব অবস্থায় পক্ষি-শাবককে বাসা হইতে আনিয়া যাদব তাহাকে পুষিয়াছিল। পাখীটি এখন বড় হইয়াছে, আর চমৎকার কথা কহিতে শিখিয়াছে। অনেকে তাহার গুণে মুগ্ধ হইয়া পাখীটি কিনিতে চাহিয়াছিল। কেহ কেহ দশ টাকা পৰ্যন্ত মূল্য দিতে স্বীকৃত হইয়াছিল। কিন্তু পাখীটিকে যাদব প্ৰাণের চেয়ে ভাল বাসিত। অনেক প্রলোভনে পড়িয়াও সে তাহাকে বিক্রয় করে নাই। যাদব বলিত,- “প্ৰাণ থাকিতে আমি আমার পাখী ছাড়িতে পারিব না।” পরদিন প্রত্যুষে যাদব খাচাটি হাতে করিয়া বাহির হইল। নয়টার পর সে বাড়ী ফিরিয়া আসিল। বাড়ী আসিয়া নরোত্তমের হাতে চেন-সম্বলিত ঘড়ি দিয়া বলিল,- “এই লও; এই তোমার ঘড়ি লও।” ঘড়ি দেখিয়া নরোত্তম ঘোরতর আশ্চৰ্য্যান্বিত হইল। সে জিজ্ঞাসা করিল,— “কি করিয়া সে চোরের দেখা পাইলে, ভাই?” যাদব উত্তর করিল,- “পুলীশে চোরকে ধরিয়াছিল। পুলীশের লোক আমাকে ঘড়ি দিয়াছে!” ঘড়ি পাইয়া নরোত্তমের আনন্দের আর সীমা রহিল না। যাদবকে সে আর অধিক কথা জিজ্ঞাসা করিল না। 8ヶ8 দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com"ির্ড”,"প্ত *******