পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনেক দিন পরে রোগী আরোগ্য লাভ করিল। ডাক্তার, বৈদ্য ও প্রতিবেশিগণ সকলেই বলিলেন,- “যাদব! কেবল তোমার সেবার বলেই রোগী এ যাত্রা পরিত্রাণ পাইল । নরোত্তমের তুমি প্ৰাণ দান করিলে।” অল্প দিন পরে যাদবের পিতা মাতার পরলোক হইল। স্কুল ছাড়িয়া যাদব কলিকাতায় কাজ কৰ্ম্মের অনুসন্ধান করিতে লাগিল। তাহার অল্পদিন পরে নিরোত্তমও স্কুল ছাড়িয়া দেশে চলিয়া গেল। দুই বন্ধুতে এইরূপে অবশেষে ছাড়াছাড়ি হইল। সওদাগর আফিসে যাদবের একটি কৰ্ম্ম হইল। কিছুদিন পরে আফিসের আর এক জন বাবু তাহার সহিত কন্যার বিবাহ দিয়া, কন্যা-দায় হইতে মুক্ত হইলেন। যাদবের দেশে ভাই ভগিনী কেহই ছিল না। ম্যালেরিয়া জুরের জ্বালায় দেশে বাস করা ভার। দেশে তাঁহার মেটে ঘর, সামান্য একটি বাগান ও কয়েক বিঘা। ভূমি ছিল। যাদব সেই সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া ফেলিলেন। বড় হইয়া তাঁহার প্রকৃতি কিছুমাত্র পরিবৰ্ত্তিত হয় নাই। টাকাগুলির অৰ্দ্ধেক দেশে তিনি গরীর দুঃখীকে দিয়া আসিলেন। বাকি অৰ্দ্ধেক বন্ধু বান্ধবে তাঁহার নিকট হইতে ধার লইল; কিন্তু কেহ আর উপুড় হস্ত করিল না। যাদব এখন বড় হইয়াছে, যাদবের কৰ্ম্মকাজ হইয়াছে, সে জন্য এখন আর তাঁহাকে যাদব বলিয়া আমাদের ডাকা উচিত নহে। এখন হইতে তাঁহাকে আমরা মুস্তফি মহাশয় বলিব। মুস্তফি মহাশয়ের ক্রমে ক্ৰমে বেতন বৃদ্ধি হইতে লাগিল। যখন তাঁহার স্ত্রী বড় হইল, তখন একখানি বাড়ী ভাড়া করিয়া সপরিবারে তিনি কলিকৃত্যু বাস করিতে লাগিলেন। মুস্তুফি মহাশয়ের বেতুন বৃদ্ধি হইতে লাগিল বটে; কিন্তু সূৰ্গীয় সচ্ছল। কখনই হইল না। মুহিনা পাইলে পথে গরিব দুঃখীকে তিনি অৰ্দ্ধেকের অধিকৃত্যুদয় আসিতেন। হাতে পয়সা না থাকিলে, কৃদ্রিখানা পৰ্যন্ত দিয়ু আসিতেন। তাঁহার দ্বারে অনেক সময়ে তিনি নিজের ও স্ত্রীর বাড়ী-ভাত কানুনুমুপথাৰ ঢ় উঠছিল। উপবাসী থাকিতেন, তথাপি কখনও তিনি টাকা ধার করিতেন না, অথবা ধারে কোনও দ্রব্য ক্রয় করিতেন না। তিনি বলিতেন—“আমার সাধ্যমতে আমি লোকের দুঃখ মোচন করিতে চেষ্টা করিব। চুরি ডাকাতি প্ৰবঞ্চনা করিয়া আমি দান খয়রাত করিব না। গোবিন্দ মামা ধুমধামের সহিত কালীপূজা করিতেন, পঞ্চ উপচারে অনেক লোককে ভোজন করাইতেন। তাহার পর যখন তাঁহার পরলোক হইল, তখন রাড়ীভৃড়ি মহলে কান্নাকাটি পড়িয়া গেল। সকলের নিকট হইতে টাকা ধার করিয়া তিনি কালীপূজা করিতেন; সমস্ত জীবন কাটুনা কাটিয়া অতি দুঃখে, অতি কষ্টে তাহারা যৎসামান্য পাঁচ সাত টাকা যাহা সঞ্চয় করিয়াছিল, তাহাই ধার লইয়া গোবিন্দ মামার কালীপূজা হইত। তাঁহাকে টাকা ধার দিয়া একজন বিধবা আত্মহত্যা করিয়াছিল। অসময়ে আমার কি হইবে, এইরূপ ভাবিয়া একজন সহায়-সম্পত্তিহীনা বিধবা ক্ষিপ্ত হইয়া গলায় দড়ি দিয়া মরিয়াছিল। পরের সৰ্ব্বনাশ করিয়া পুণ্য করা উচিত নহে, আমার এই মত; তাহাতে তোমরা আমাকে নাস্তিকই বল, আর খ্ৰীষ্টানই বল।” মুস্তফি মহাশয়ের এইরূপ কথা শুনিয়া সকলেই তাঁহার নিন্দা করিত। তিনি অর্থহীন ছিলেন। বলিয়া, সকলেই তাঁহাকে ঘৃণা করিত। তাঁহার নিকট টাকা ধার না পাইয়া অনেকে তাঁহার উপর ঘোরতর বিরক্ত হইত। সকলে বলিত,- “ ওটা মানুষের মধ্যেই নয়। অতি হতভাগা-লক্ষ্মীছাড়া।” 8brや firls six gas sel - www.amarboicomf$" is