পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুৰ্থ অধ্যায় মাশচটকের বিপদ মুস্তফি মহাশয়ের কাল যেমন পূৰ্ব্বে কাটিতেছিল, এখনও সেইরূপ কাটিতে লাগিল। যাহা উপাৰ্জন করিতেন, তাহা হইতে কাহাকেও আট আনা, কাহাকেও এক টাকা, কাহাকেও দুই টাকা, এইরূপ দিয়া গরিব দুঃখী লোকের তিনি সহায়তা করিতেন। ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিতদিগের উপরও তাঁহার ভক্তি কম ছিল না। আজ কাল, চারিদিকে স্বজাতির অবনতি দেখিয়া তাঁহার বুক ফাটিয়া যাইত। ব্ৰাহ্মণগণ পুনরায় যাহাতে দেশের শীর্ষস্থান অধিকার করিতে পারেন, নানা বিদ্যায় পারদর্শী হইয়া যাহাতে তাহারা সাধারণের শিক্ষাদাতা ও জ্ঞানদাতা হইতে পারেন, নিজে দীনভাবে সংসারযাত্ৰা নিৰ্ব্বাহ করিয়া, নিঃস্বাৰ্থভাবে পরিশ্রম করিয়া, যাহাতে তাঁহারা জগতের দুঃখ দূর ও স্বচ্ছন্দতা বৃদ্ধি করিতে পারেন, সেই উদ্দেশে নানা দিকে নানাভাবে তিনি যত্ন করিতেন। সচ্চরিত্র, নির্লোভ, বিদ্বান ব্ৰাহ্মণগণকে তিনি যথাসাধ্য অর্থ সাহায্য করতেন। দুই তিনটী ব্ৰাহ্মণ-বালকের বিদ্যা অধ্যয়নের ব্যয় তিনি প্ৰদান করিতেন। স্বজাতির ও স্বদেশের মঙ্গলের নিমিত্ত তিনি সৰ্ব্বদাই যত্ন করিতেন। নানা দিকে এইভাবে ব্যয় করিয়া তাঁহার বেতনের যাহা কিছু অবশিষ্ট থাকিত, তাহাতেই অতি কষ্টে তিনি দিনপাত করিতেন। কখনও কখনও তাঁহার মনে হইত যে, স্ত্রীপুত্ৰকে বঞ্চনা করিয়া আমি পরের উপকার করিতেছি। কিন্তু তৎক্ষণাৎ আবার তিনি মনে করিতেন যে, যৎসামান্য যাহা কিছ অনাথ অনাথাদিগকে আমি প্ৰদান করি, প্ৰাণ থাকিতে বন্ধ করিতে পারিব না। আহা! সেই সামান্য সাহায্য পাইয়া তাহদের কত র হয়! শুনিয়াছি যে, শীতকালে বৈবাহিক মাশ্চন্টক মহাশয়ের অবস্থার দিন দিনি উন্নতি হইতে লাগিল। তিনি যে আফিসে কাজ করিতেন, তাহার সাহেবেরা জাহাজে জিনিস পত্ৰ প্ৰদান করিতেন। ইহাকে বুঝি কাপ্তোনি কাজ বলে। ময়দা, চাউল, ঘূত, তৈল, মাংস প্রভৃতি যাহা কিছু আবশ্যক হয়, জাহাজে তাহা যোগাইতে হয়। দুই একটী দ্রব্যের ঠিকা লইয়া মাশ্চন্টক মহাশয় বিলক্ষণ লাভ করিতে লাগিলেন। তাহা ব্যতীত অতি অল্প মূল্যে তিনি দুই খানি গাধাবোট কিনিয়াছিলেন। ঘাট হইতে গাধবােটে পাট প্রভৃতি দ্রব্য লইয়া জাহাজে তিনি বােঝাই দিতেন। তাহাতেও বিলক্ষণ দু’পয়সা লাভ হইত। ইহা ব্যতীত, দৈনিক সুদে কিছু টাকা তিনি চোটায় খাটাইতেন, তাহাতেও লাভ বড় অল্প ছিল না। এইরূপ নানা উপায়ে চারি দিক হইতে তাঁহার উপাৰ্জন হইতে লাগিল। ওপারে যে বাড়ী তিনি ভাড়া লইয়াছিলেন, তাহা তিনি ক্রয় করিলেন, ও নিকটস্থ আরও ভূমি ক্রিয় করিয়া, তাহার উপর বৃহৎ এক অট্টালিকা নিৰ্ম্মাণ করাইলেন। ইতিমধ্যে মুস্তফি মহাশয়ের কন্যা প্ৰভাবতী বড় হইয়া উঠিল। সে শ্বশুরালয়ে গমন করিল। তাহার শ্বশুরালয় হইতে ক্ৰমাগত দুঃসংবাদ আসিতে লাগিল। শ্বাশুড়ীর শুচিবাই অত্যন্ত বাড়িয়াছে। “শগড়ি, শগড়ি” করিয়া তিনি পাগল হইয়াছেন। “ঐ ওখানে শগড়ি পড়িয়া রহিল, ঐ কুলা খানা শগড়ি হইয়া গেল, ঐ বিছানা শগড়ি হইয়া গেল, ঐ মুড়িতে জল লাগিয়া শগড়ি 8 দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comন্তির্জািকস্তানাথ রচনা সংগ্ৰহ