পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুস্তফি জিজ্ঞাসা করিলেন,- “আমি যখন এই আফিসে ছিলাম, তখন আবদুল এই দ্রব্য যোগাইত। সে আবদুল কোথায় গেল?” লইয়াছেন। তিনি নিজে হাতে এ কাজ করেন না। একজন কসাই চাকর রাখিয়াছেন, সে এই কাজ করে। মাশ্চন্টক মহাশয় কেবল জীয়ন্ত জীব কিনিয়া দেন। যে দিন যেরূপ প্রয়োজন হয়— কোন দিন তিনটী, কোন দিন চারিটী জীব তাঁহাকে যোগাইতে হয়।” আরও আশ্চৰ্য্যান্বিত হইয়া মুস্তাফি বলিলেন,- “ব্ৰাহ্মণের সন্তান হইয়া তিনি এই কাজ করেন?” আফিসের লোক বলিল,— “এ কাজে বেশ লাভ আছে। বিষয়কৰ্ম্ম করিতে দোষ কি?” মুস্তাফি অবাক হইলেন। তাঁহার বাল্যকালের বন্ধু, তাহার বৈবাহিক যে কিরূপ লোক, তাহা তিনি এখন বুঝিতে পারিলেন। এই দুৰ্ব্বত্ত কসাই যে পুনরায় তাহাকে টাকা ফিরাইয়া দিবে, সে আশা তাঁহার মন হইতে তিরোহিত হইল। তিনি আরও শুনিলেন যে, গত কল্য তাঁহার বৈবাহিক অনেকগুলি দুগ্ধহীন জীব স্বল্প মূল্যে পাইয়াছিলেন। সেজন্য তাঁহার টাকার প্রয়োজন হইয়াছিল। কাল যদি টাকা না দিতেন, তাহা হইলে এই জীবগুলি তাঁহার হাত-ছাড়া হইয়া যাইত। মুস্তাফি নিশ্বাস ফেলিয়া ভাবিলেন,- “আফিসের টাকা লইয়া কেবল বিশ্বাসঘাতকতা-পাপে আমি কলুষিত হই নাই। সেই টাকা দিয়া বধ করিবার নিমিত্ত নরোত্তম অনেকগুলি যাহা ক্রয় করিয়াছে, তাহার জন্য গোহিত্যা-পাপেও আমি কলুষিত হইলাম । আমার স্থান হইবে না।” বৈবাহিকের অনুসন্ধানে তিনি কসাইখানা গমনুষ্টঙ্করিলেন না । গঙ্গা পার হইয়া তিনি বৈবাহিকের বাটীতে গমন করিলেন। কিন্তু তাঁহারািটতে তিনি প্রবেশ করিলেন না। নিকটে একখানি মুদির দোকান ছিল। দোকানের তু তিনি পড়িয়া রহিলেন, আর মাশ্চটক মহাশয় বাড়ী আসিয়াছেন কি না, সংবাদ লইতে লাগিলেন। সন্ধ্যা হইয়া গেল, তবুও তিনি বাটী আসিলেন না। রাক্রি সময় তিনি বাটী প্ৰত্যাগমন করিলেন। মুস্তফি তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ । তাঁহাকে দেখিবা মাত্র মাশ্চন্টক বলিলেন, — “তুমি এখানে! সন্ধ্যার সময় তোমার বাটী। গিয়াছিলাম, তাই জন্য তোমার দেখা পাই নাই। বেনের নিকট টাকা রাখিয়া আসিয়াছি। যাও, আর কোন ভাবনা নাই, এখন বাটী যাও।” এই সুসমাচার শ্রবণ করিয়া মুস্তাফির মন আহাদে পরিপূর্ণ হইল। গদগদ স্বরে তিনি বলিলেন,- “ভাই, অধিক আর কি বলিব, তুমি আমার প্রাণ দান করিলে।” এই কথা বলিয়া রুদ্ধশ্বাসে তিনি বাড়ী ফিরিয়া আসিয়া, গৃহিণীকে জিজ্ঞাসা করিলেন,— “বেই যে টাকা রাখিয়া গিয়াছেন, সে টাকা কোথায়?” গৃহিণী উত্তর করিলেন,- “টাকা! বেই! কৈ, বেই তো এখানে আসেন নাই! আমার কাছে কেহ তো টাকা রাখিয়া যায় নাই। বরং তোমার আফিস হইতে চাবির জন্য একজন বাবু আসিয়াছিল। সে বলিল যে, লোহার সিন্দুকের চাবি তুমি পাঠাও নাই। সাহেব টাকা রাখিতে কিম্বা টাকা বাহির করিতে পারিতেছেন না। কাজ কৰ্ম্মের গোলমাল হইতেছে। সাহেব তোমার উপর বড় রাগ করিয়াছেন।” মুস্তাফির প্রাণ উড়িয়া গেল। বৈবাহিক যে একান্তই তাহার। সৰ্ব্বনাশ করবেন, এখন তাহা তিনি নিশ্চয় বুঝিলেন। মুস্তফি মহাশয় সে রাত্রে আর কিছুমাত্র আহারাদি করিলেন না । নিঃশব্দে বিছানায় পড়িয়া রহিলেন। ভয়ে ও ভাবনায় তাহার বুক ফটিয়া যাইতে লাগিল। সমস্ত 88 দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboicomf76".