পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদয় শেষ হইয়া গেল। ঘরে পিত্তল কঁসার দ্রব্য রহিল না। তাহার পর খাট পালঙ্গ প্রভৃতি কাষ্ঠ-নিৰ্ম্মিত দ্রব্য বিক্রয় করিতে লাগিলেন। অল্প দিনে তাহাও শেষ হইয়া গেল। মাশ্চটক মহাশয় যে তক্তপোষ খানির উপর শুইয়া—বসিয়া থাকিতেন, তাহা ব্যতীত ঘরে আর কোন কাঠের জিনিষ রহিল না। অবশেষে শাল দোশালা ও বিক্রয়-উপযোগী যাহা কিছু কাপড় চােপড় ঘরে ছিল, তাহাও বিক্রয় করিয়া ফেলিলেন। পূৰ্ব্বে সাধ করিয়া উলঙ্গ থাকিতেন, এক্ষণে বাধ্য হইয়া কতক পরিমাণে তাঁহাকে উলঙ্গ থাকিতে হইল। শোকে দুঃখে মাশ্চটক-গৃহিণীর চিত্ত দিন দিন অধিক হইতে অধিকতর বিকৃত হইতে লাগিল। শুচিবাই ব্যতীত এক্ষণে আর একটী নৃতন বাই তাঁহার মনে উপস্থিত হইল। দ্রব্যাদি বিক্রয় করিয়া হাতে পয়সা হইলেই তাহার অধিকাংশ তিনি কাঠ, কয়লা ও গুল কিনিয়া খরচ করিয়া ফেলিতেন। তাহা দিয়া সন্ধ্যার পর ঘরের ভিতর তিনি আগুন করিতেন। শুচিবাই ব্যতীত এক্ষণে তােহর আগুন করা বাই হইল । এই সময় তাহাদের আর একটী বিপদ উপস্থিত হইল। যে লোক নিলামে ইহাদের বাড়ী কিনিয়াছিলেন, তিনি ইহাদিগকে উঠাইয়া, বাড়ী অধিকার করিতে চেষ্টা করিলেন। কিন্তু মাশ্চটক-গৃহিণী তাঁহার কথা-বিন্দু-বিসর্গও বুঝিতে পারিলেন না। “ম্যাগী পাগল না কি! উঠিয়া যাইতে বলিলে, বিড় বিড় করিয়া কি বকে! আর এক দিন আসিয়া ইহাদিগকে গলা-ধাক্কা দিয়া বাড়ী হইতে বাহির করিয়া দিব।” এই কথা বলিয়া আপাততঃ তিনি চলিয়া গেলেন। বেচিয়া পয়সা হয়, এরূপ কোন বস্তু অবশেষে ঘরে আর রহিল না। মাশ্চন্টক মহাশয় ও তাহার স্ত্রীর উপবাস হইতে লাগিল। মাশ্চটক- র দ্বার প্রায় সৰ্ব্বদাই বন্ধ করিয়া রাখিতেন। সেজন্য ইহাদের বাড়ীর ভিতর কি না হইতেছে, পাড়ার লোক বড় তাহা জানিতে পারিত না। ক্ষুধার জ্বালায় মাশ্চটক রাত্রিকালে,- “ময়না কোথা গেল! ময়না কোথা গেল! এই কথা বলিয়া অতি চীৎকার করিতেন। আর কোন কথা তিনি বলিতে পারিতেন না। ইহার চীৎকারুগুত বৃদ্ধি হইল কেন, পাড়ার লোক তাহা বুঝিতে পারিল ଲୀ । মাশ্চন্টক মহাশয়ের বাড়ীর পশ্চাৎ অর্থাৎ পূৰ্ব্ব দিকে এক পুষ্করিণী ছিল। পুষ্করিণীতে যাইবার নিমিত্ত ইহাদের খিড়কি দ্বার ছিল। সেই খিড়কি দ্বারের নিকট ছোট একটী তেঁতুল গাছ ছিল। পুষ্করিণীর পশ্চিম ধারে মাশ্চন্টক মহাশয়দিগের ঘাট ছিল। তাহা ব্যতীত উত্তর দিকে একটী ও পূৰ্ব্ব দিকে দুইটী ঘাট ছিল। উত্তর দিকের ঘাট গোপাল, গোপালের-মা প্রভৃতি পাড়ার ব্ৰাহ্মণ ব্ৰাহ্মণীগণ ব্যবহার করিতেন। পূৰ্ব্ব দিকের একটী ঘাট কাওরা ও মুচিব্দের ছিল। পুষ্করিণীর দক্ষিণ দিকে ছােট ছােট বন-গাছ দ্বারা আবৃত পতিত ভূমিখণ্ড ছিল। তাহাতে কাওরা, মুচি প্রভৃতি নীচ জাতিরা মল ত্যাগ করিত। এক দিন দুই প্ৰহরের সময় গোপালের-মা ঘাটে আসিয়া দেখিলেন যে, মাশ্চটক-গৃহিণী তেঁতুল তলায় দাঁড়াইয়া গাছ হইতে কি পাড়িতেছেন। গোপালের-মা জিজ্ঞাসা করিলেন,- “ওখানে কি করিতেছি দিদি?” কোন উত্তর না দিয়া মাশ্চটক-গৃহিণী ধীরে ধীরে বাটীর ভিতর গমন করিলেন । পর দিন অপরাহে দুইটার সময় বামা কাওরাণী শশব্যস্ত হইয়া গোপালের-মায়ের মাটীতে উপস্থি হইল। রাগ ও দুঃখের সহিত গোপালের-মাকে সে বলিতে লাগিল,- “আজ তিন দিন ধরিয়া আমি এই কাজ দেখিতেছি। কাহাকেও কোন কথা বলি নাই। কিন্তু আর আমি থাকিতে (S8 fi:Ilă zi, o go sel - www.amarboicom**