পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পারি না। আমরা নীচ জাতি। আমার ছেলেপিলে মুখে রক্ত উঠিয়া মরিবে, আমার হাতে কুড়িকিষ্টি হইবে। উনি যেন পাগল হইয়াছেন; কিন্তু আমাদের অধৰ্ম্ম কোথায় যাইবে? আমাদিগকে ইহার শান্তি ভোগ করিতে হইবে।” আশ্চৰ্যন্বিত হইয়া গোপালের-মা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন,- “কি হইয়াছে? কে পাগল বামা কাওরাণী উত্তর করিল,— “চল, দেখিবে চল । আজ আবার ঘাটে আসিয়াছেন। তিন দিন যা করিতেছেন, আজও তাই করিবেন! চল, দেখিবে চল ।” গোপালের-মা পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন,- “কোথায় যাইব? কি দেখিব?” বামা কাওরাণী উত্তর করিল,— “একবার ঘাটে চল । দোহাই তোমার, একবার ঘাটে গিয়া দেখিবে চল। বড় শুচিবাই! বড় পিটুপিটে! তাই দেখিবে চল । ডিঙাইয়া পথ চলিতেন। আমরা নীচ জাতি। পাছে আমাদের বাতাস গায়ে লাগে, তাই আমাদিগকে দেখিলে দশ হাত দূরে গিয়া দাঁড়াইতেন। এখন কি করিতেছেন, তাহা একবার দেখিবে চল!” গোপালের-মা দেখিলেন যে, কাওরাণীর মন এত উত্তেজিত হইয়াছে যে, তাহাকে আর অধিক কথা জিজ্ঞাসা করা বৃথা। আস্তে আস্তে তিনি ঘাটের দিকে চলিলেন। কাওরাণী তাঁহাকে আপনাদের ঘাটের দিকে লইয়া গেল ও একটী গাছের অন্তরালে দাড়াইয়া চুপি চুপি ঘাটের দিকে চাহিয়া দেখিতে বলিল । গাছের অন্তরালে দাড়াইয়া গোপালের-মা দেখিলেন প্ৰাণী ছিল না, কেবল কাওরাদের ঘাটে ঠিক জলেক্ট করিতেছিলেন। সভয়ে এদিক ওদিক চাহিয়া ফ্ৰাঞ্জন্টিক কুড়াইয়া লইলেন। তখন বামা কাওরানী চুপ্রিশ্নটুিপি বলিল,- “ঐ দেখ! আজি তিন দিন আমি এই কারখানা দেখিতেছি।” গোপালের-মা দেখিলেন যে, কোনলৈ পাশে ফেলিয়া দিয়াছিল। মাশ্চটক-গৃহিণী অতি যত্নে সেই উচ্ছিষ্ট চৰ্ব্বিত ডাঁটাগুলি কুড়াইয়া বাম হাতে রাখিলেন। তাহাতে যে দুই একটী ভাতের কণা লাগিয়াছিল, দক্ষিণ হাত দিয়া অতি সাবধানে তাহা খুঁটিয়া খুঁটিয়া খাইতে লাগিলেন। তাহার পর সেই চৰ্ব্বিত ডাঁটাগুলি একে একে পুনরায় তিনি চিবাইতে ও চুষিতে লাগিলেন। বামা কাওরাণী চুপি চুপি বলিল,- “আমি কাওরা, নীচ জাতি। ঐ ডাটা আমি খাইয়াছিলাম। ব্ৰাহ্মণের মেয়ে হইয়া আমার ঐটাে উনি খাইলেন। উনি পাগল হইয়াছেন। কিন্তু আমার দশা কি হইবে? আমার ছেলেপিলে মুখে রক্ত উঠিয়া মরিবে।” গোপালের-মা মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন,— “হায়! হায়! কাহার অদৃষ্ট কি আছে, তাহা বলিতে পারা যায় না। ইনি সেই অধরের মা—অহঙ্কারে পৃথিবীতে যাহার পা পড়িত না! ঘোর দৰ্পে সকলকে যিনি ঘৃণা করিতেন! অশুদ্ধ ও অপরিষ্কার বলিয়া সকলকে যিনি ঘৃণা করিতেন! শগড়ির নামে যিনি অজ্ঞান হইতেন, হায়! হায়! সেই লোক আজ বামী কাওরাণীর উচ্ছিষ্ট ভোজন করিতাছেন! পাগল হইয়া ইনি এ কাজ করেন নাই; বোধ হয়, কিছু দিন ইহাদের আহার হয় নাই। পেটের জ্বালায় ইনি এই কাজ করিতেছেন। ক্ষুধার জ্বালায় লোকে কি না করে? শুনিয়াছি যে, দুর্ভিক্ষের সময় মানুষ,- মানুষের মাংস ভক্ষণ করে, ছেলের নিকট হইতে ভাত কাড়িয়া খায়। আরও শুনিয়াছি যে, কেহ শ্লেষ্মা পরিত্যাগ করিলে, ক্ষুধাৰ্ত্ত লোকগণ দৌড়া

  • ABls våd (SS BGl www.amarboi.com ro ዕኢSር