পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুৰ্গন্ধযুক্ত কৃষ্ণবর্ণের পূয নির্গত হইতেছে। পিশাচগণ সেই পূৰ্য চুষিয়া খাইতেছে। তাঁহার রক্ত মাংস অস্থিমজ্জা গলিত হইয়া পিশাচদিগের ভক্ষ্যদ্রব্য হইয়াছে। পিশাচগণ তাহা ভক্ষণ করিয়া মনের আনন্দে খিলখিল শব্দে হাসিতেছে। ভয়ে সুরেশ ভাল করিয়া আর কিছু দেখিতে পারিল না; ভয়ে সে চক্ষু মুদ্রিত করিল। দারুণ দুর্গন্ধে তাহার ঘোরতর কষ্ট হইতে লাগিল। এক প্রকার অদ্ভুত স্বগীয় বলে রক্ষিত না হইলে সে মূৰ্ছিত হইয়া ভূতলে পতিত হইত। যাহা হউক, সে আর ঘরের ভিতর প্রবেশ করিতে পারিল না। গোপালের হাত ধরিয়া তৎক্ষণাৎ সে স্থান হইতে সে পলায়ন করিল। বাহিরে আসিয়া সুরেশ স্বাভাবিক অবস্থা প্ৰাপ্ত ও সুস্থ হইল। আশ্চৰ্য্য কথা এই যে, গোপাল এ সমুদয় ব্যাপার কিছুই দেখিতে পাইল না, কোন শব্দ সে শুনিল না, গোবর ও অন্যান্য বিষয়ের দুৰ্গন্ধ ব্যতীত বিশেষ কোন গন্ধ সে আঘাণ করিল না। সুরেশ গোপালকে জিজ্ঞাসা করিল,— “মাশ্চন্টক মহাশয় কি আমাদের বিদেশ গমন সম্বন্ধে কোনরূপ প্ৰতিবন্ধকতা করিয়াছিলেন?” গোপাল উত্তর করিল,- “হাঁ! আমাদের প্রতিবেশী রাধানাথ চক্ৰবৰ্ত্তীর ভায়রাভাইয়ের ভগিনীপতি বিলাত গিয়াছিলেন। এই পুষ্করিণী লইয়া রাধানাথের সহিত মাশ্চন্টক মহাশয়ের মোকদ্দমা হইয়াছিল। রাধানাথের কুটুম্ব বিলাত গিয়াছিল, সেই অপরাধে রাধানাথকে তিনি একঘরে করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন।” সুরেশ বলিল,- “দেখ, গোপাল! এক জনেরও অপকার করিলে ঘোর পাপ হয়। বিদেশগমন সম্বন্ধে যাহারা প্ৰতিবন্ধকতা করে, তাহদের দ্বারা কোটি লোকের অপকার হয়। তাহাদের পাপের সীমা পরিসীমা নাই। তাহাদের হইতে ঘোরতর দুৰ্গন্ধ বাহির হয়। এখন বুঝিলাম যে, কেন মাশ্চন্টক মহাশয়ের হইয়াছে।” মাশ্চটকদিগের ভরণপোষণ সম্বন্ধে যাহা , সে সমুদয় আয়োজন করিয়া সুরেশ আর একটী কাজ করিল। যে লোক টী ক্ৰয় করিয়াছিলেন, গোপালের সহিত সুরেশ তাহার নিকট গমন করিয়া, a. অবস্থার কথা তাঁহাকে জানাইল । সুরেশের পিতা ও ভগিনীর সহিত মাশ্চন্টক মহাশয় কিরূপ ব্যবহার করিয়াছিলেন, তিনি তাহা অবগত ছিলেন। এক্ষণে গোপালের মুখে সুরেশের সদ্ব্যবহারের কথা শুনিয়া তিনি সাতিশয় বিস্মিত হইলেন। সেই দৃষ্টান্তের অনুকরণ করিবার নিমিত্ত তাহারও ইচ্ছা হইল। মাশ্চন্টক মহাশয়কে বাটীতে বাস করিবার নিমিত্ত তিনি অনুমতি প্ৰদান করিলেন। মাশ্চটক-গৃহিণীর জ্ঞান গোচরের ব্যতিক্রম হইয়াছিল। নগদ টাকা ও দ্রব্যাদির নিমিত্ত মূল্য কে দিতেছে, কেবল একবার তিনি মুদিকে তাহা জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন। মুদি কোন কথা গোপন করিল না। মুদির উত্তর শুনিয়া তিনি বলিলেন,- “সুরেশ!”— কেবল এই একটী কথা বলিয়া তিনি দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া চুপ করিয়া রহিলেন। নগদ যে পাঁচ টাকা পাইতেন, তাহা দিয়া মৎস্য ও তরকারি তিনি বড় ক্রয় করিতেন না। তাহার অধিকাংশ, আগুন করিবার নিমিত্ত তিনি কাঠ, কয়লা ও গুল কিনিয়া নষ্ট করিতেন। এইরূপে আরও কিছু দিন কাটিয়া গেল। মাশ্চটক-গৃহিণীর মন আরও বিকৃত হইল। মাশ্চন্টক মহাশয় অধিক আহার করিতেন। তাহা ভালরূপ পরিপাক হইত না। তক্তপোষের পার্শ্বে বসিয়া তিনি অনেকবার রাশি রাশি মল ত্যাগ করিতেন। তাহার স্ত্রী বার বার তাহা পরিষ্কার করিতেন; দিন দিন পরিষ্কার করিতে করিতে সেই বিষ্ঠাকে মাশ্চটক-গৃহিণীর গােবর বলিয়া ভ্ৰম হইল। জলে গোবর গুলিয়া বাড়ীর সর্বত্র সেচন করা-ও দিনের মধ্যে চারি বার 63d দুনিয়ার পাঠক এক হও! ৩ www.amarboi.comন্মিলাক্যনাথ রচনাসংগ্ৰহ