পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকে তাহাকে “আলকেমি” বলিত। “আলকেমি” বিদ্যা লইয়া লোকে কোথায় কি করিয়াছিল, সে কথা বলিতে গেলে একটি গল্প হয়; কিন্তু আজ সে গল্পটি করিব না। আজ তোমাদিগের নিকট আমি বটগার সাহেবের গল্প করিব। জীবনের প্রথম অবস্থায় ইনিও “আলকেমি” বিদ্যার চৰ্চা করিয়াছিলেন। অর্থাৎ তামাকে সোনা করিবার নিমিত্ত চেষ্টা করিয়াছিলেন। ১৬৮৫ খৃষ্টাব্দে অর্থাৎ ২১৭ বৎসর পূৰ্ব্বে বটগার জন্মণী দেশের অন্তর্গত প্রশ্নশিয়া রাজ্যে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। ১২ বৎসর বয়সে কাজ শিখিবার নিমিত্ত তিনি এক ডাক্তারখানায় নিযুক্ত হন। বাল্যকাল হইতেই রসায়নশাস্ত্রের প্রতি তাহার বিশেষ অনুরাগ ছিল। এই সময়ে রসায়নশাস্ত্র ও “আলকেমি” একই বিদ্যা ছিল। অবসর পাইলেই বটগার “আলকেমি” বিদ্যার চৰ্চা করিতেন। অর্থাৎ নানা বস্তুর সংযোগে তামা, লৌহ প্রভৃতি নিকৃষ্ট ধাতুকে স্বর্ণে পরিণত করিতে চেষ্টা করিতেন। কয়েক বৎসর ধরিয়া ক্রমাগত তিনি পরীক্ষা করিতে লাগিলেন এবং দিবারাত্রি নানা বস্তু আগুনে গলাইতে লাগিলেন। বটগারের প্রখর বুদ্ধি ও অসাধারণ বিদ্যা দেখিয়া ডাক্তারখানার স্বামীও তাঁহাকে এ কাজে সহায়তা করিতে লাগিলেন। কয়েক বৎসর পরে বটগার সকলকে বলিলেন যে,- “আমি তামাকে সোনা করিবার উপায় করিয়াছি।” বটগার সত্য বলিতেছেন, কি মিথ্যা বলিতেছেন, তাহা স্থির করিবার নিমিত্ত একদিন তাহার প্রভুর অর্থাৎ ডাক্তারখানার স্বামীর সম্মুখে পরীক্ষা হইল। কি উপায়ে, তাহা বলিতে পারা যায় না; কিন্তু বটগার প্রভুর সম্মুখে সোনা প্ৰস্তুত করিলেন। লোককে ফাঁকি দিবার নিমিত্ত সচরাচর সন্ন্যাসিগণ এইরূপ একটি উপায় অবলম্বন করে। একটু ফাঁপা লীেহনিৰ্ম্মিত নল লইতে হয়; নলের ভিতর কিছু সােনা রাখিয়া তাহার মুখ মােমেরুঞ্জেরী বন্ধ করিয়া দিতে হয়। নলটি এখন ছড়ির ন্যায় দেখায়। ঘূত, গন্ধক প্রভৃতি নানাকুণ্ডাির্কাজে দ্রব্য মুচিতে রাখিয়া মুচিটি আগুনে বসাইতে হয়। আগুনের তাপে মুচির দ্রব্য যুগুৰ্নি’গালিয়া যায়, তখন মন্ত্রপাঠ করিতে করিতে সেই লৌহনল দ্বারা মুচি দ্রব্য বারবার ত হয়। যে মোমের দ্বারা নলের মুখ বন্ধ করা হইয়াছিল, আগুনের তাপে তাহা এ যায়; সুতরাং নলের ভিতর যে সোনা ছিল, তাহা এখন বাহির হইয়া মুচির ভিতর গিয়া পড়ে। আগুনের আরও প্রখর তাপে ঘূত্য গন্ধক প্রভৃতি জুলিয়া যায়। ক্রমে মুচিতে সেই স্বর্ণ ব্যতীত আর কিছুই থাকে না। তখন সকলের নিশ্চয় বিশ্বাস হয় যে,- “হাঁ! এই সাধু স্বর্ণ প্রস্তুত করিতে জানে বটে।” বটগার এই উপায়ে নিজের প্রভুকে ফাঁকি দিয়াছেন কি না, তা বলিতে পারি না। তবে এইমাত্র বলিতে পারি যে তাহার ও উপস্থিত অন্যান্য ব্যক্তির সকলের মনে বিশ্বাস হইল যে, বটগার সত্য সত্যই সোনা প্ৰস্তুত করিবার উপায় উদ্ভাবন করিতে সমর্থ হইয়াছেন। চারিদিকে জনরব হইল যে, অমুক ডাক্তারখানার একজন লোক সোনা করিতে পারে। “সোনা-করা” লোককে দেখিবার নিমিত্ত ডাক্তারখানার সম্মুখে ভিড় হইল। ক্রমে এই কথা প্রশ্নশিয়া দেশের রাজার কানে উঠিল। তিনি বটগারকে ডাকিতে পাঠাইলেন। বটগার রাজার সম্মুখে উপস্থিত হইয়া একখণ্ড সোনা নজর দিয়া বলিলেন,- “তামা হইতে এই স্বর্ণখণ্ড আমি প্ৰস্তুত করিয়াছি।” এই সময় নানা যুদ্ধে রাজার অনেক টাকা খরচ হইয়াছিল। তাঁহার ভাণ্ডার শূন্য হইয়া পড়িয়াছিল। টাকার বড় খাকাতি! রাজার মনে আনন্দের সীমা রহিল না। তিনি ভাবিলেন যে, এই লোকের দ্বারা যত ইচ্ছা তত সোনা প্ৰস্তুত করিতে পারিব। কোন এক দুৰ্গম দুর্গের ভিতর আবদ্ধ থাকিয়া রাশি রাশি স্বর্ণ প্রস্তুত করিবার নিমিত্ত তিনি বটগারকে আদেশ করিলেন। বটগার এখন অন্ধকার দেখিলেন। কেবল যে কেল্লার ভিতর কয়েদ থাকিতে হইবে, ○。 frig -ibs gas se - www.amarboicomf: