পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হইল না। মুচি প্রস্তুত করিবার নিমিত্ত কোন স্থান হইতে একপ্রকার লোহিত বর্ণের মৃত্তিকা আসিয়াছিল। বটগার সেই মৃত্তিকা দ্বারা পাত্ৰ নিৰ্ম্মাণ করিয়া পোড়াইয়া দেখিলেন যে, তাহা হইতে লোহিত বর্ণের একপ্রকার চীনের বাসন প্ৰস্তুত হইতে পারে। বটগার সেইরূপ অনেক বাসন প্ৰস্তুত করিয়া রাজাকে প্ৰদান করিলেন। তাহা বিক্রয় করিয়া রাজা অনেক টাকা পাইলেন। কিন্তু প্ৰকৃত চীনের বাসন শুভ্রবর্ণের হইয়া থাকে। সাদা রঙের বাসন যত মূল্যে বিক্রীত হয়, এ লাল রঙের বাসন তত মূল্যে বিক্রীত হয় না। সে জন্য বটগার সাদা রঙের বাসন প্ৰস্তুত করিতে ক্ৰমাগত চেষ্টা করিতে লাগিলেন। রাজার যাহাতে টাকা হয়, সেজন্য বটগার দিবারাত্রি ঘোরতর পরিশ্রম করিতে লাগিলেন বটে, কিন্তু রাজা তাঁহাকে কারাবাস হইতে মুক্ত করিলেন না। কত বিনয় করিয়া, কত খেদ করিয়া বটগার রাজাকে পত্র লিখিতে লাগিলেন। একখানি চিঠিতে তিনি এইরূপ লিখিয়াছিলেন,-“মহারাজ। আপনার কাৰ্যে আমি প্ৰাণ সমৰ্পণ করিয়াছি। দিবারাত্রি আপনার জন্য পরিশ্রম করিতেছি। কোন পারিতোষিক আমি চাই না; আমি কেবল এই ভিক্ষা চাই যে, আর আমাকে পিঞ্জরে আবদ্ধ করিয়া রাখিবেন না। আমাকে মুক্ত করিয়া দিন। আমাকে স্বাধীনতা প্ৰদান করুন। আমি আর পলায়ন করিব না। যতদিন দেহে আমার প্রাণ থাকিবে, ততদিন প্ৰাণপণে আমি আপনার জন্য পরিশ্রম করিব।” কিন্তু রাজা সে কথায় কর্ণপাত করিলেন না। দিবসে বটগার প্রহরিগণ দ্বারা পরিবেষ্টিত হইয়া থাকিতেন। রাত্রিকালে ঘরে তাঁহাকে চাবি দিয়া রাখা হইত! যাহা হউক, বটগার শুভ্ৰবর্ণের চীনের বাসন করিতে চেষ্টা করিতে লাগিলেন । নানারূপ মৃত্তিকা ও নানারূপ মশলা দ্বারা পরীক্ষা লাগিল। দিবারাত্রি পরীক্ষা চলিতে লাগিল। পরীক্ষার বিরাম নাই। ক্রমাগত পরীক্ষা না করিলে নূতন বিষয় আবিষ্কার করিতে পারা যায় না। শত শত পরীক্ষা বিফল হইয়াও যদি একটি সফল হয়, তাহা হইলেও সৌভাগ্য বলিয়া মানিতে হয় । জাৰ্ম্মণি দেশের হইতে যে সমুদয় মৃত্তিকা ও প্রস্তর প্রেরিত হইত, তাহাদিগকে পোড়াইয়া শুভ্ৰবর্ণের চীনের বাসন প্রস্তুত করিতে পারিলেন না। বিলাত প্রভৃতি দেশের লোক এই সময় কোঁকড়া-কোঁকড়া সুদীর্ঘ পরচুল পরিধান করিত। ইংরেজী ভাষায় ইহাকে Wig বলে। একপ্রকার শুভ্রবর্ণের মৃত্তিকাচুর্ণ মাখাইয়া এই পরচুলের শোভা আরও বৃদ্ধি করা হইত। প্রচলিত প্ৰথা অনুসারে বটগারও মাথায় পরচুল পরিধান করিতেন। একদিন তাঁহার পর চুল মাথায় কিছু ভারি বোধ হইল! তিনি লোকদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন,-“আজ আমার পর চুল এত ভারি কেন?” একজন উত্তর করিল,-“আজি ইহার উপর একপ্রকার নূতন মৃত্তিকাচুর্ণ লেপন করা হইয়াছে।” বটগার বলিলেন, —“কৈ, সে মাটি দেখি! সেই মৃত্তিকা দেখি!” সেই মৃত্তিকা দেখিয়া তিনি বিস্মিত হইলেন। তিনি ভাবিলেন,— “হয়তো এই মৃত্তিকা দ্বারা পাত্ৰ নিৰ্ম্মাণ করিলে, শুভ্রবর্ণের চীনের বাসন প্রস্তুত হইবে । বস্তৃতঃ তাহাই হইল। এই শুভ্ৰ মৃত্তিকাকে কাওলিন (Kaolin) বলে। আমাদের দেশে ইহা সীওতাল পরগণা, ভাগলপুর, মুঙ্গের প্রভৃতি জেলায় পাওয়া যায়। জাৰ্ম্মণি দেশের যে অংশ হইতে ইহা আসিয়াছিল, রাজা সেই স্থান হইতে এই মৃত্তিকা প্রচুর পরিমাণে আনাইলেন। চীনের বাসন প্রস্তুত করিবার নিমিত্ত তিনি প্ৰকাণ্ড এক কারখানা স্থাপিত করিলেন। অন্যান্য দেশের রাজাদিগের নিকট তিনি সংবাদ পাঠাইলেন যে,—“আমার নগরে উৎকৃষ্ট চীনের বাসন প্ৰস্তুত হইতেছে। এখন হইতে চীন হইতে আর সে বাসন আমদানী করিতে হইবে না।” ফলকথা, এই বাসন বেচিয়া রাজা সোনা করা অপেক্ষা অধিক লাভ মনে করিলেন। কি মৃত্তিকা দিয়া পাত্র (ሮ8O ifGNʼRIig{ °iiğq5 q<q5 zR8! ~y www.amarboi.com?%*7i°f*t7°*°"P7R**