"কঙ্কাবতী বোন আমার, ঘরে ফিরে এস না?
বড় দিদি হই আমি, ভাল কি আর বাস না?
তিন ভগ্নী আছি দিদি, দুইটি বিধবা তার।
কঙ্কাবতী তুমি ছোট বড় আদরের মা’র৷"
নৌকায় বসিয়া বসিয়া কঙ্কাবতী উত্তর করিলেন,—
"শুনিয়াছি আছে না-কি জলের ভিতর।
শান্তিময় সুখময় সুশীতল ঘর।
সেইখানে যাই দিদি পূজি তোমার পা।
এই কঙ্কাবতীর নৌকাখানি হুধু যা৷"
এই কথা বলিতেই কঙ্কাবতীর নৌকাখানি আরও গভীর জলে ভাসিয়া গেল। তখন, ভাই আসিয়া কঙ্কাবতীকে বলিলেন,—
"কঙ্কাবতী ঘরে এস, কুলেতে দিও না কালি!
রেগেছেন বাবা বড়, দিবেন কতই গালি।
বালিকা অবুঝ তুমি, কি জান সংসার-কথা?
ঘরে ফিরে এস, দিও না বাপের মনে ব্যথা৷"
কঙ্কাবতী উত্তর করিলেন, —
"কি বলিছ দাদা তুমি বুঝিতে না পারি।
জ্বলিছে আগুন দেহে নিবাইতে নারি।
যাও দাদা ঘরে যাও হও তুমি রাজা।
এই কঙ্কাবতীর নৌকাখানি হুথু যা!"
এই কথা বলিতেই কঙ্কাবতীর নৌকাখানি আরও দূরজলে ভাসিয়া গেল।
তখন কঙ্কাবতীর মা আসিয়া বলিলেন,—
"কঙ্কাবতী লক্ষ্মী আমার, ঘরে ফিরে এস না?
কাঁদিতেছে মায়ের প্রাণ, বিলম্ব আর করো না।
ভাত হ'ল কড় কড়, ব্যঞ্জন হইল বাসি।
কঙ্কাবতী মা আমার সাত দিন উপবাসী৷"
কঙ্কাবতী উত্তর করিলেন,—
"বড়ই পিপাসা মাতা না পারি সহিতে।
তুষের আগুন সদা জ্বলিছে দেহেতে।
এই আগুন নিবাইতে যাইতেছি মা।
কঙ্কাবতীর নৌকাখানি এই হুথু যা৷"
এই বলিতে কঙ্কাবতীর নৌকাখানি আরও দূর-জলে ভাসিয়া গেল। তখন বাপ আসিয়া বলিলেন,—
"কঙ্কাবতী ঘরে এস, হইবে তোমার বিয়া।
কত যে হতেছে ঘটা দেখ তুমি ঘরে গিয়া।
গহনা পরিবে কত আর সাটিনের জামা।
কত যে পাইবে টাকা নাহিক তাহার সীমা৷"