পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তোমাদের মাতামহীর মৃত্যু হইল, তোমাদের মামা, যাহার এই বাড়ী, তিনি তখন বালক। লেখাপড়া শিখাইবার নিমিত্ত একজন আত্মীয় তাহাকে কলিকাতায় লইয়া গেলেন। সীতা তাহার মামার বাড়ীতে গেল। সীতার মামা আমাকে ছাড়াইলেন না। আমি দিদিমণিকে মানুষ করিতে লাগিলাম । দিদিমণির মামারা এক সময়ে খুব বড়মানুষ ছিলেন। শুনিলাম যে, তাহার মাতামহ জগমোহন রায়চৌধুরী একজন দুৰ্দান্ত লোক ছিলেন। দিদিমণিকে লইয়া আমি যখন তাহার বাড়ীতে যাইলাম, তখন তিনি জীবিত ছিলেন না। দিদিমণির মামাও দেশে থাকিতেন না, পশ্চিমে কোথায় কৰ্ম্ম করিতেন। দিদিমণিকে বাড়ীতে রাখিয়া তিনি সে-স্থানে চলিয়া গেলেন। সে বাড়ী কি ভয়ঙ্করা! তিন মহল বাড়ী, বাহির বাড়ীতে, মাঝের বাড়ীতে, ভিতর বাড়ীতে, একতলায় দোতলায় কত যে ঘর, তাহা গণিতে পারা যায় না। কিন্তু সব ভৌ-ভৌ, দেখিলেই যেন ভূতের বাড়ী বলিয়া মনে হয়; বাহিরের বাড়ীতে কি মাঝের বাড়ীতে জনপ্রাণী বাস করে না। এতবড় বাড়ীতে আমরা কেবল ছয় জন রহিলাম; (১) তোমার মায়ের পিসী অলক ঠাকরুণ, তাহার বয়স প্রায় আশী হইয়াছিল, আর তিনি সম্পূর্ণ কালা ছিলেন। (২) আর একজন ব্ৰাহ্মণী, তাহার সহচরী, তাহারও বয়স বড় কম হয় নাই। তিনি রন্ধন করিতেন। (৩) একজন চাকর, তাহার নাম পিতেম। (৪) পিতে।মের স্ত্রী, তাহার নাম বিলাসী। (৫) তাহার পর আমি ও (৬) তোমাদের মা, আমার দিদিমণি, সীতা । বাড়ীর ভিতর দােতলায় তিনটি ঘরে আমরা ছয় জুনে ব্যস কৃষ্ণু লাগিলাম! প্ৰথম অলক ঠাকরুণ ও সহচরীর ঘর; তাহার পার্শ্বে আমার ও রাষ্ট্রের; তাহার পার্শ্বে পিতেম ও বিলাসীর ঘর। পশ্চিমদিকে এই তিনটি ঘর ছিল! উত্তর ও<খুব্ধৰ্বদিকে অনেক ঘর পড়িয়াছিল। বিলাসীর ঘরের পার্শ্বে আর একটি ঘর লইয়া আমি বুঢ়ীদিমিণির খেলাঘর বাধিয়া দিয়াছিলাম। বাটীর চারিদিকে অনেক দূর পর্যন্ত আব, কীট্রষ্ট নারিকেল, সুপারী প্রভৃতি নানা গাছের বাগান ছিল। বাগানের ভিতর চারি-পাঁচটি ছিল। কিন্তু সে মিথ্যা গ্রাম, ম্যালেরিয়া জুরের উপদ্রবে অনেক লোক মরিয়া গিয়াছে; অনেক ততদূর মােঠ ধূ-ধূ করিতেছে। শ্মশানের ন্যায়। সেই বাড়ীতে গিয়া আমি মনে করিলাম,- “ওমা! এ বাড়ীতে আমি কি করিয়া থাকিব? ভয়েই মরিয়া যাইব ।” “যাহা হউক, যেখানে আমার দিদিমণি, সেখানে সব ভাল— সেইখানেই আলো— সেইখানেই সুখ। দিদিমণির দৌড়াদৌড়ি, দিদিমণির খেলা, দিদিমণির কথা, দিদিমণির হাসিতে সেই শ্মশানভূমি,- যেন স্বৰ্গতুল্য হইল। এমন যে অলক-ঠাকুরুণ, যাহার গোমড়ামুখ দেখিলে ভয় হয়, দিদিমণিকে দেখিলে তাহারও মুখ যেন একটু উজ্জ্বল হইত, তাহারও মুখে যেন একটু হাসি দেখা দিত। দিদিমণির যেমন রূপ, তেমনি গুণ। তেমন ফুটফুটে, দুধে আলতার রং আমি আর কোন মেয়ের দেখি নাই। কেমন পুরন্ত গাল দুইটি, কেমন ছোট্টো হাঁ টুকু। কেমন টুকটুকে ঠোঁট, কেমন পটল-চেরা ঢুলু ঢুলু উজ্জ্বল চক্ষু, কেমন কাল লাল চক্ষুর পাতা, কেমন সরু সরু চকচুকে রেশমের মত নরম চুল! হা কপাল! সে দিদিমণিকে ছাড়িয়া এখনও আমি প্ৰাণ ধরিয়া বাঁচিয়া আছি। তারপর দিদিমণি যখন কথা কহিত, তখন প্ৰাণ যেন শীতল হইত, প্ৰাণের ভিতর দিদি আমার যেন সুধা ঢালিয়া দিত। (a8 দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~) www.amarboi.com"ির্ড”********