পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুরুষোত্তমের মুখ প্ৰফুল্প হইল। সে বলিল,— “না, না;-তুমি এখন অনেকদিন বঁচিবে। তোমার ব্যায়রাম তত কঠিন নয়। টাকা পাই না পাই,-মায়ের মত আমি তোমার সেবা করিব । সময়-অসময়ে আমি তোমাকে দেখিব।” বিদ্যাধরী বলিল,- “সে আর অধিক দিন দেখিতে হইবে না। নিজের শরীর আমি বেশ বুঝিতে পারিতেছি। তাছাড়া বঁচিতে আর আমার কিছুমাত্র ইচ্ছা নাই। টাকাগুলি তোমাকে আমি দিয়া যাব। বাবু উকীল; উইল কাহাকে বলে, তা আমি জানি। গিনীর নামে বাবু উইল করিয়াছেন। একখানা কাগজে লিখিলেই হইবে যে, অমুককে আমার টাকা-গহনা দিয়া যাইলাম! তা করিলেই তুমি সব পাইবে। কিন্তু একথা প্ৰকাশ করিও না।” সেইদিন হইতে পুরুষোত্তম যত মাছ, যত তরকারী বিদ্যাধরীর পাতে চাপাইতে লাগিল । পিতেম ও গোলাপী কিছু পায় না। সেজন্য তাহার ক্রমাগত গজগজ করিতে লাগিল, কিন্তু বাবুর তিরস্কারের ভয়ে প্রকাশ্য ঝগড়া করিতে পারিল না। চারি-পাচ দিন পরে বিদ্যাধরী একখানা কাগজ আনিয়া পুরুষোত্তমের হাতে দিল । পুরুষোত্তম সেই কাগজ কোন লোককে দিয়া পড়াইয়া দেখিল। বিদ্যাধরীর মৃত্যুর পর সমুদয় সম্পত্তি সে পাইবে, কাগজে এইরূপ লেখা ছিল । পুরুষোত্তম আরও জানিয়া দেখিল যে, এরূপ কাগজকে উইল বলে, এইরূপ উইল করিয়া লোক আপনার সম্পত্তি অন্য লোককে প্ৰদান করে। পুরুষোত্তমের মন আনন্দে পরিপূর্ণ হইল। সেইদিন হইতে গোয়ালিনীকে বলিয়া বিদ্যাধরীর জন্য সে একপোয়া করিয়া দুধের রোজ করিয়া দিল। সে একদিন বিদ্যাধরী বলিল,- “আমার আর বিজ্ঞাষ্ট্র ‘বিদ্যাধরী। দিন দিন তুই যেন পাখী হইয়া যাইতেছিস্ ァ・ s বড় জোর আর তিন মাস।' আমি ব: $ “কবিরাজ মহাশয়! বাচিতে আর আমার ইচ্ছা! নাই। রোগের যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না। ১মজ হাতে বিষ খাইয়া মরিলে অগতি হইবে। ঔষধের সঙ্গে যদি একটু বিষ দিয়া আপনি আঁমাকে মারিতে পারেন, তাহা হইল আপনার বড় পুণ্য হয়।” কবিরাজ মহাশয় বলিলেন, — ‘‘না রে না! তা আর করিতে হইবে না। তার নাড়ীর গতিক যেরূপ, তাহাতে বড় জোর আর তিন মাস'।” পুরুষোত্তম বিদ্যাধরীর দিকে চাহিয়া দেখিল। পূৰ্ব্বে যদি সে একপাথর ভাত খাইত, এখন সে দুই পাথর ভাত খায়। রোগী হওয়া দূরে থাকুক, পুরুষোত্তমের নিকট হইতে ভাল ভাল আহাৱীয় দ্রব্য পাইয়া দিন দিন সে যেন ফুলিয়া উঠিতেছিল। আজ তিন মাস পুরুষোত্তম তাহার সেবা করিতেছিল। আজ তিন মাস সে আপনার মাহিনা দেশে পাঠায় নাই। সমুদয় টাকা বিদ্যাধরীর জন্য খরচ করিয়াছিল। আরও তিন মাস কাটিয়া গেল। বিদ্যাধরী মরে না! ভাল ভাল জিনিস খাইয়া তাহার শরীরে বরং কান্তি ফাটিয়া পড়িতে লাগিল। এ পৰ্যন্ত বিদ্যাধরীর জন্য পুরুষোত্তমের পঁচিশ টাকা খরচ হইয়াছিল। পুরুষোত্তমের মনে খটকা জনিল ।

                  • ”...দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.conf ولا68y