পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লাগিল। মাতা সুবালাকে সাস্তুনা করিতে লাগিলেন। পরদিন সুবালার মাতার মৃত্যু হইল। সুবালা মাটিতে পড়িয়া কঁদিতে লাগিল। কেহই তাঁহাকে সান্তুনা করিতে পারিল না। রায় মহাশয় ও তাঁহার গৃহিণী দুঃখিত হইলেন বটে, কিন্তু কথায় বলে,- “অল্প শোকে কাতর, আর অধিক শোকে পাথর”; তাঁহারা পূৰ্ব্ব দুর্ঘটনায় যেরূপ অস্থির হইয়াছিলেন, এবার ততদূর অধীর হইলেন না। কিছুদিন পরে রায় মহাশয় সুবালাকে তাহার কাকার বাড়ীতে পাঠাইয়া দিলেন। সেস্থানে খুড়ীমাতা তাহাকে যথেষ্ট আদর-যত্ন করিতে লাগিলেন। কাকার পুত্ৰ-কন্যাদিগের সহিত খেলা করিয়া মাতার শোক সুবালা অনেক পরিমাণে ভুলিয়া গেল। এইস্থানে আর একটি বালকের সহিত সুবালার সাক্ষাৎ হইল। এই বালকটির নাম বিনয়। কলিকাতায় ইহার পিতা বাস করেন। এই গ্রামে ইহার মাতুলালয়। বালকের বয়ঃক্রম দশ বৎসর। বিনয় উত্তমরূপে ঠাকুর গড়িতে পারিত। দুর্গা, কালী প্রভৃতি প্রতিমা সে গড়িয়া দিত, মনের আনন্দে বালক-বালিকাগণ তাহা পূজা করিত। কুম্ভকার হইয়া বিনয় ঠাকুর গড়িত, চিত্রকর হইয়া সে রং কিরিত, মালী হইয়া সে সাজাইত, পুরোহিত হইয়া সে পূজা করিত, কামার হইয়া সে কচুগাছ বলিদান করিত, অন্যান্য বালকগণের সহিত ঢাকিচুলি হইয়া সে বাজনা বাজাইত। নানা সাজে সাজিয়া সে ও অন্যান্য বালকগণ ঠাকুরের সম্মুখে যাত্রা করিত অথবা থিয়েটারের অভিনয় করিত। কাৰ্ত্তিক মাসে সুবালা রায় মহাশয়ের বাটীতে প্রত্যাগমন করিল। তাহার সংসারের সকলেই একে একে মৃত্যুমুখে পতিত হইয়াছে। এক সুবালা তাঁহাদের সংসারে এখন আর কেহ। ছিল না। তাঁহারা স্ত্রী-পুরুষে সুবালার উপর মন-প্ৰা ণ করিলেন। কিরূপে সুবালা বঁচিয়া থাকিবে, রাত্রিদিন এখন তাঁহাদের সেই চিন্তা হইল।” রায় মহাশয় একদিন গৃহিণীকে বলিলেন, ক এক বার মনে হয় যে, নূতন উইল করিয়া সুবালাকে সমস্ত সম্পত্তির উত্তারিধারিণী পঞ্চদশ বৎসর বয়ঃক্রমের কথা কাটিয়া দিই ও যখন ইচ্ছা তখন বিষয় হস্তান্তর রক্ষমতা তোমাকে প্রদান করি। কিন্তু খাদা ভূতের কথা মনে হইলে কিছু আর করিতে ইচ্ছা হয় না।” গৃহিণী উত্তর করিলেন, — “সুবালা আগে বঁচি থাকুক, তাহার পর অন্য কথা। আপাততঃ এ বিষয়ের সহিত সুবালার কোন সংস্রবে কাজ নাই। আমি যদি পঞ্চাশ বৎসর। পৰ্যন্ত বঁচিয়া থাকি, তাহা হইলে সুবালাকেই সমস্ত সম্পত্তি দিয়া যাইব ।” রায় মহাশয় বলিলেন,- “তোমাকে একটি প্রতিজ্ঞা করিতে হইবে। সুচিন্তা ও সুবালার গুণে কন্যা ও জামাতাকে আমরা ভুলিয়া ছিলাম। সুচিন্তার শোক আমার হৃদয়ে যেন শেলের ন্যায় বিধিয়া আছে। যেরূপ নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করিয়া সে মরিয়াছে, তাহা মনে হইলে আর জ্ঞান থাকে না। আমি সৰ্ব্বদাই সেই কথা ভাবিয়া থাকি। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিয়াছি যে, যদি বঁচিয়া থাকি, তাহা হইলে অল্পবয়সে আমি সুবালার বিবাহ দিব না। পািনর বৎসর পূর্ণ না হইলে তাহার বিবাহ আমি দিব না। সুবালার কাকাকে আমি এ সম্বন্ধে পত্র লিখিয়াছিলাম। তিনি আমার প্রস্তাবে সম্মত হইয়াছেন। আমার যদি পরলোক হয়, তাহা হইলে ষোড়শ বৎসর বয়ঃক্রমের পূৰ্ব্বে সুবালার তিনি বিবাহ দিবেন না,-আমার নিকট তিনি এইরূপ সত্য করিয়াছেন। তুমিও আমার নিকট সেইরূপ সত্য কর; কারণ, যেরূপ রোগে পড়িয়া আছি, তাহাতে কখন কি হয়, তাহা বলিতে পারা যায় না। ডাক্তারে বলিয়াছে যে, আর দুইবার আমার পীড়া বৃদ্ধি হইবে, সেই সময় আমি অজ্ঞান হইয়া পড়ব। দ্বিতীয় আক্রমণে বাঁচিয়া গেলেও wo দুনিয়ার পাঠক এক হও! ৩ www.amarboi.comন্মিলাক্যনাথ রচনাসংগ্ৰহ