পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাহা পাড়িয়া দিত। ফুল লইয়া সুবালা ও চপলা নানারূপ অলঙ্কার গড়িয়া গায়ে পরিত। ধনুকধারী গাছ হইতে নানারূপ ফলও তাহাদিগকে পাড়িয়া দিত। কুল, তেঁতুল, আমড়া, কামরাঙ্গা প্রভৃতি অন্নফল খাইলে রায়নী বকিতেন। কিন্তু শিশুমুখে এই সকল দ্রব্য অপেক্ষা সুখাদ্য আর কি আছে? পাকা আমড়ার সময়, কখন টুপ করিয়া একটি আমড়া পড়িবে, সেই প্রতীক্ষায় সুবালা ও চপলা, উৰ্দ্ধমুখে গাছ পানে চাহিয়া থাকিত। কঁচা তেঁতুল, কামরাঙ্গা ও কুলের সময় আঁচলে বাধিয়া তাহারা লবণ লইয়া যাইত। ধনুকধারী গাছ হইতে পাড়িয়া দিত, মনের সুখে তাহারা লবণ দিয়া তাহা ভক্ষণ করিত। পাকা ও ডাঁসা করঞ্চাগুলি লুণ দিয়া খাইতে কি সুন্দর! কষা-বকুল-ফল কি অমৃততুল্য নহে? প্রচুর শস্যসম্বলিত কলসীর খেজুর সুবালার ভাল লাগিত না। কেবলমাত্র খোসা দিয়া বীজটা ঢাকা সেই যে দেশী খেজুর, বল দেখি সে কেমন? ধনুকধারী কাল যে আমলকী পাড়িয়া দিয়াছে, তাহা চিবাইয়া জল খাইলে কেমন মিষ্টি बले ! এইরূপে সুবালা দিনযাপন করিত লাগিল। সুবালার প্রতি রায় মহাশয় ও তাঁহার গৃহিণীর স্নেহ দিন দিন বাড়িতে লাগিল। সুবালার গুণে সকল লোক মুগ্ধ হইল। রায়মহাশয়কে সুবালা দাদামহাশয় বলিয়া ডাকিত,রায়-গৃহিণীকে আদর করিয়া সে দিদিমণি বলিত। এই সময় গ্রামের লোকের আর একটি নূতন ভয় উপস্থিত হইল। রায় মহাশয়ের বাগানে দুইজন মালী কাজ করে—ত্ৰিলোচন ও শঙ্করা। বাগানের উত্তর সীমায় একখানি চালাঘরে তাহারা বাস করে। একদিন রাত্রিকালে গ্ৰাম হইতে তাহারা বাগানে প্রত্যাগমন করিতেছিল। তাহারা দেখিল যে, সাদা কাপড় পরিধেয় দুইটি বাগানের ভিতর দাড়াইয়া আছে। চীৎকার করিয়া তাহারা তৎক্ষণাৎ পলায়ন করিল। গিয়া তাহারা বলিল যে, সে স্ত্রীলোক দুইটির পায়ের গোড়ালি সম্মুখ দিকে। ৱ বুঝিতে। আর বাকী রহিল না। সেই দুইটি স্ত্রীলোক মানুষ নহে, তাহারা শাকচুন্নি বলে। পরদিন মালী দুইজন রায় মহাশয়কে বলিল যে, স্ত্রীলোক কুগাঁয়ে বড় বড় কৃমি বুলিতেছিল। তাহাদের দাঁতও প্রায় একহাত লম্বা উপর দিকে পা রাখিয়া, হাতে ভর দিয়া, দেড় হাত জিহবা লক লক্‌ করিয়া, বাগানের ভিতর তাহারা বন বন শব্দে ঘুরিতেছিল। তাহার পর আরও কয়জন গ্রামবাসী শাকচুন্নি দুইজনকে দেখিতে পাইল। গ্রামে হুলুস্কুল পড়িয়া গেল। আতঙ্কের আর সীমা রহিল। না। সকলে বলিল যে,- “এ খাদা ভূতের কৰ্ম্ম। কোথা হইতে একজোড়া শাকচুন্নি আনিয়া আমাদের গ্রামে সে ছাড়িয়া গিয়াছে; একটা নয়, দুইটা,-একজোড়া। এক তো খাদা ভূতের জ্বালাতেই অস্থির। তাহার উপর শাকচুন্নির উপদ্রব,—একটা নয়, একজোড়া। বল দেখি, ছেলেপুলে লইয়া এ স্থানে আমরা কি করিয়া বাস করি! একটা নয়, একজোড়া!” গ্রামের লোক ব্যতিব্যস্ত হইয়া পড়িল । পুনরায় শ্রাবণ মাস আসিল। শাকচুন্নির উপর আবার খাদাভূত আসিয়া পাছে কোন বিপদ ঘটায়, সেই ভয়ে রায়মহাশয় আগে থাকিতে সুবালাকে তাহার কাকার বাড়ীতে পাঠাইয়া দিলেন, সে স্থানে গিয়া প্রথম প্রথম সুবালার মনে সুখ হয় নাই। বিনয় তখন সে গ্রামে ছিল না। গত বৎসর বিনয় বলিয়া গিয়াছিল,— “সুবালা! যখন তুমি তোমার কাকার বাড়ীতে আসিবে, আমিও সেই সময় আমার মামার বাড়ীতে আসিব ।” তবে কেন বিনয় আসিল না।” সুবালার মনে দুঃখ হইল। বিনয়ের উপর তাহার রাগ হইল। চারি পাঁচ দিনের পরে বিনয়ের মাতুলানীকে সে জিজ্ঞাসা করিল,- হ্যা গা! তোমাদের S দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comঙ্গিাকনাথ ঠ"সংগ্ৰহومان