পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপবাসী থাকিতে হইল না। গ্রামের লোক ক্ৰমে জানিতে পারিল যে, সুবালাকে একবার বলিলেই তাঁহাদের দুঃখ দূর হইবে, কেহ তাহাদিগের উপর অন্যায় অত্যাচার করিতে পরিবে: না। দুই হাত তুলিয়া সুবালাকে সকলে আশীৰ্ব্বাদ করিতে লাগিল। বড়ালমহাশয় এই কাৰ্য্যে সুবালার বিশেষরূপে সহায়তা করিতে লাগিলেন। তিনি সকল কথা রায়-গৃহিণীকে জানিতে দিতেন না। অধিক খরচ হইতেছে দেখিয়া রায়-গৃহিণী যদি বকিতেন, তাহা হইলে সুবালা আহার পরিত্যাগ করিয়া কঁদিতে বসিতেন। কাজেই রায়-গৃহিণীকে চুপ করিয়া থাকিতে হইত। সুবালা সম্বন্ধে আর একটি গল্প এই—নিফর ডোম নামক একজন গ্রামবাসী বাগানে কাঁচা তাল কাটিতে আসিয়াছিল। তালশাস ছাড়াইবে, সেজন্য তাহার স্ত্রী সঙ্গে আসিয়াছিল। দুই বৎসরের শিশু কন্যা তাহার সহিত ছিল । সুবালা সেই কন্যার হাতে দুইটি সন্দেশ দিয়াছিলেন। সন্দেশ সে কখনও খায় নাই। সেরূপ উপাদেয় মিষ্টদ্রব্য ভক্ষণ করিয়া তাহার। আনন্দের আর সীমা রহিল না। তাহার মা বলিল,— “ইনি তোমার মাসী, সুবালা মাসী । ইহার পায়ে গড় করা।” শিশু বলিল,— “খুবালা মাখী।” সুবালা বলিলেন, — “আহা! কেমন আধা-আধা স্বরে এ আমাকে থুবালা মাসী বলিল। তোমার কন্যার নাম কি?” তাহার মাতা বলিল,— “ইহার এখনও নাম হয় নাই, ইহাকে আমরা খুকী বলিয়া ডাকি।” কিছুদিন পরে সেই কন্যার জুরবিকার হইল। তাহার বঁচিবার আশা কিছুমাত্র ছিল না। একদিন রাত্ৰিতে বিকারের ঘোরে সে বায়না লইল যে,- “আমি খুবালা মাখীর কাছে। যাইব ।” তাহার পিতা-মাতা তাহাকে বিধিমতে ভুলাইতে চেষ্টা করিল। শিশু কিন্তু কিছুতেই গান্ত হইল না। সে ক্রমাগত কাঁদিতে লাগিল,— “আমি খুবালা মাখীর কাছে যাব।” পরদিষ্ট’প্ৰাতঃকালেও সেই কথা বলিয়া সে gাছিল। চাকর-চাকরাণীদের মধ্যে সেই বিষয় ফুল্লিতেঁছিল,- “নীচে লোকের একবার আম্পৰ্দ্ধা দেখ! সুবালার দিদি নািফর ডোমের দিয়াছিলেন। সে এখন পীড়িত হইয়াছে। সকলে বলিতেছে যে, সে বঁাচিবে সেই সন্দেশের লোভে কাল হইতে সে আবদার ধরিয়াছে যে, আমি সুবালা মাসীর যাব । নীচ লোকের একবার আম্পৰ্দ্ধা দেখা!” সুবলার কানে সেই কথা উঠিল। কাহাকেও কিছু না বলিয়া তিনি তৎক্ষণাৎ খানকয়েক বিস্কুট গোটাকতক ঘড়ার খেজুর, একটু মিশ্রি ও একটি কমললেবু লইয়া বাড়ী হইতে বাহির হইলেন। বরাবর নফর ডোমের বাড়ী গিয়া উপস্থিত হইলেন। সে স্থানে গিয়া দেখিলেন যে,একটি অতি কদাকার ময়লা বালিশ মাথায় দিয়া একখানি চেটাইয়ের উপর শিশু চক্ষু মুদ্রিত করিয়া পড়িয়া আছে। তাহার মাতা নিকটে বসিয়া কাঁদিতেছে, তাহার মুখ হইতে মাছি তাড়াইতেছে, আর পিপাসায় যখন সে হাঁ করিতেছে, তখন তাহার মুখে একটু জল দিতেছে। সুবালাকে দেখিয়া ডোেমনী চমকিত হইয়া দাঁড়াইল। সে বলিল,— “তুমি দিদি, আমাদের এই কুড়েঘরে!” সুবালা জিজ্ঞাসা করিলেন,- “তোমার কন্যা এখন কেমন আছে, তাহা বল।” ডোমিনী উত্তর করিল,— “কাল সমস্ত রাত্রি খুকী ছটুফটু করিয়াছে ও মাথা চালিয়াছে। সেই সঙ্গে সে বায়না লইল যে, আমি সুবালা মাসীর কাছে যাইব । তোমাকে একবার মাত্র সে দেখিয়াছিল, তথাপি তোমার কথা তাহার মনে ছিল। তোমার ঐ চাদমুখখানি, দিদি, একবার যে দেখিয়াছে, তোমার মধুর কথা যে একবার শুনিয়াছে, সে কি আর কখন তাহা ভুলিতে পারে? আহা! বাছা আমার কি জানে যে, তুমি কে আর আমরা কি! তোমাকে দেখিবার নিমিত্ত r8 দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comৰ্ম্মিািক্যনাথ রাষ্ট’ সংখ্যাই