পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুবালা উত্তর করিলেন,- “কি গন্ধা! ঠিক যেন ব্ৰাপ্তির গন্ধ। রাগের কথা তুমি কি বলিবো?” ধনুকধারী বলিল,— “আমি যাহা চাই, মনে করিলে তুমি তাহা দিতে পার। কাকা মহাশয়কে বলিয়া কি হইবে?” সুবালা বলিলেন, — “তুমি কি চাও, তাহা না জানিলে কি করিয়া উত্তর দিব?” কিছুক্ষণ ইতস্ততঃ করিয়া অবশেষে ধনুকধারী বলিল,— “ছেলেবেলা হইতে আমি তোমাকে বড় ভালবাসি। তোমার জন্য আমি প্ৰাণ বিসর্জন করিতে পারি। আমি তোমাকে চাই।” সুবালার মুখ রক্তবর্ণ হইল! স্তম্ভিত হইয়া কিছুক্ষণ ধনুকধারীর দিকে তিনি চাহিয়া ৱিহিলেন। তাহার পর তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন,- “তুমি মদ খাইয়ােছ।” ক্ৰমে ধনুকধারীর সাহস বৃদ্ধি হইল। সে বলিল,— “তোমাকে এ কথা বলিতে আমার সাহস হইত না, সেজন্য একটু মদ খাইয়াছি!” সুবালা বলিলেন, — “ছেলেবেলার কথা স্মরণ করিয়া তোমাকে আমি ক্ষমা করিলাম। যাও, বাড়ী যাও। যতক্ষণ না তোমার জ্ঞান না হয়, ততক্ষণ শুইয়া নিদ্ৰা যাও।” একে মনের আবেগে উন্মত্তপ্রায় হইয়াছিল, তাহার উপর আবার সুরাপান করিয়াছিল। ধনুকধারীরও ক্ৰোধ হইল। সুবালার সহিত সমান উত্তর করিতে তাহার সাহসী হইল। ধনুকধারী বলিল,- “বাল্যকাল হইতে আমি তোমার সঙ্গে আছি। যখন যাহা বলিয়াছ, তখন তাহা করিয়াছি। একসঙ্গে কত খেলা, কত আমোদ-আহাদ করিয়াছি। আজ আমি কেহ হইলাম না, আর সেই কেঁকড়া-চুলো ছবি-অাঁকা বেটা সব হইল? ষে বড়মানুষের ছেলে, আমি গরীবের ছেলে। সেইজন্য তুমি আমাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করি ব্ৰাহ্মণ, আমি কায়স্থ, সেইজন্য তুমি আমাকে পদদলিত করিবে? আর সেদিনই – ? কলিকাতায় সভা হইয়াছিল, তাহাতে স্থির হইয়াছে যে, আমরা ক্ষত্রিয়। চারিদিকে)কায়স্থরা যজ্ঞোপবীত গ্ৰহণ করিতেছে। আর একমাস অশুচি নাই, এখন বারে দিন। ধ্ৰুজ্জার দাস নাই, এখন বৰ্মা। যেমন দেবযানী—“ এইরূপ বুলিতে বলিতে ধনুকধারীর্ভুক্ত? একটু সংজ্ঞা হইল। দেবযানীর গল্প বলিতে তাহার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সে বলিতে পারিল না, বলিতে বলিতে চুপ হইয়া গেল। তাহার পর ধীরে ধীরে সুমিষ্ট স্বরে সে বলিল,— “সুবালা! তোমাকে প্রাণ অপেক্ষা আমি ভালবাসি। যদি তুমি আমাকে বিবাহ না কর, তাহা হইলে এ প্ৰাণ আমি আর রাখিব না। এই দেখ আমি একখানি ছোরা প্ৰস্তুত করিয়াছি। তোমাকে আমি কিছু বলিব না, কিন্তু এই ছোরা আমি নিজের বুকে মারিয়া প্ৰাণ বিসৰ্জ্জন করিব।” এই কথা বলিয়া, জামার ভিতর হইতে একখানি ছোরা বাহির করিয়া সে সুবালাকে দেখাইল । সুবালা একটু ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, — “তোমার কথায় রাগ করিব, কি হাসিব, তাহা আমি বুঝিতে পারিনা। তুমি পাগল হইয়াছ। উপন্যাস-পুস্তক পাঠ করিয়া তােমার মস্তিষ্ক বিকৃত হইয়া গিয়াছে। যাও, বাড়ী যাও। তোমার মন্দ করিতে ইচ্ছা করি না। কিন্তু পুনরায় যদি ওরূপ কথা আমাকে বলিতে সাহস কর, তাহা হইলে আমি বড়ালমহাশয়কে বলিয়া দিব। তিনি তোমাকে বাড়ী হইতে দূর করিয়া দিবেন।” ধনুকধারী পুনরায় রাগিয়া উঠিল। পুনরায় সে ক্ৰোধ সম্বরণ করিতে পারিল না। সে বলিল— “বড়ালমহাশয় আমাকে বাড়ী হইতে দূর করিয়া দিবেন? হা, হা, হা! ভাল কথা বটে ! বড়ালমহাশয় আমাকে তাড়াইয়া দিবেন! হা, হা, হা!” Web'br দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comৰ্ম্মিািক্যনাথ রচনাসংগ্ৰহ