পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অধিকার করিতে চেষ্টা করিল। সেদিন বাড়ীর ভৃত্যগণ তাহাদিগকে তাড়াইয়া দিল; কিন্তু প্রতিদিন তাহারা আসিয়া এইরূপ বিবাদ-বিসম্বাদ করিতে লাগিল। সেজন্য সুবালা তাহাদের জন্য গুটিকতক নূতন কোিটর নিৰ্ম্মাণ করাইলেন। প্রথম তাহারা সে নূতন গৃহে যাইতে সম্মত হইল না। কিন্তু লাঠি হাতে করিয়া চপলার ভগিনী পাগলী পায়রাদিগকে রক্ষা করিতে লাগিল। সেজন্য নিরুপায় হইয়া তাহারা নূতন নিৰ্ম্মিত কোটরে গিয়া বাস করিল। যে বৃক্ষতলে বসিয়া সুবালা পক্ষীদিগকে ভোজন প্ৰদান করিতেন, সেই বৃক্ষে দুইটি কাঠবিড়ালী বাস করিত। গাছে বসিয়া অনেকদিন ধরিয়া তাহারা দেখিতেছিল যে, তাহদের বাড়ীর নিকট প্রতিদিন সদাব্রত হইতেছে। এক মানবকন্যা সেই পুণ্যকার্য্যের অনুষ্ঠান করিয়াছেন। এই মানবীর মুখশ্ৰী অতি মৃদু, অতি মধুর, দয়ামায়াতে পরিপূর্ণ। তাঁহার নিকট গমন করা উচিত কি না, অনেক দিন ধরিয়া কাঠবিড়াল ও কাঠবিড়ালী এই চিন্তায় নিমগ্ন রহিল। সুবালা ও পক্ষিগণ স্ব স্ব স্থানে প্ৰস্থান করিলে, কাঠবিড়াল দুইটি সভয়ে নিম্নে নামিয়া যৎসামান্য যাহা কিছু উচ্ছিষ্ট পড়িয়া থাকিত, দুই হাতে তাহা ভক্ষণ করিত। তাহা দেখিয়া সুবালা কাঠবিড়ালদের জন্য ছোলা আনিতে আরম্ভ করিলেন। অন্যান্য পক্ষীদিগের ভোজন সমাপ্ত হইলে কাঠবিড়ালদিগের জন্য সুবালা চলিয়া গেলে, গাছ হইতে নামিয়া তাহারা সেই ছোলা ভক্ষণ করিত। দিন দিন তাহাদের সাহস বৃদ্ধি হইতে লাগিল। তাঁহাদের ভয় দূর করিবার নিমিত্ত সুবালা আপনার পশ্চাৎদিকে ছোলা বিকীর্ণ করিতে লাগিলেন। মানব-কন্যা অন্যমনস্কা আছে, আমাদিগকে দেখিতে পাইবে না, এইরূপ ভাবিয়া চুপিচুপি গাছ হইতে নামিয়া তাহারা সেই ছোলা খাইতে লাগিল। সুবালা ক্ৰমে নিজের ছোলা ছড়াইয়া দিলেন। নিৰ্ভয়ে সে। স্থানের খাদ্যও তাহারা ভক্ষণ করিতে লাগিল। তাঁহায় স্থানের খাদ্যও তাহারা ভক্ষণ করিল। অবুশোিধ’তাহারা সুবালার স্কন্ধে বসিয়া তাঁহার হাত হইতে খাদ্য গ্ৰহণ করিতে কিছুমাত্র সঙ্কুচূিড্ৰইইল না।

  • পাষ্ট্ৰঞ্জী আহারের লোভে সে স্থানে আসিয়া উপস্থিত হইল। শালিক পাখী, চড়ুই পাখী, পায়রা,’টিয়া পাখী, কাক, কাঠবিড়াল প্রভৃতি পশু-পক্ষী দ্বারা পরিবৃত হইয়া সুবালা যখন গাছতলায় বসিয়া থাকিতেন, তখন সে বিচিত্র দৃশ্য দর্শন করিয়া সকলেই আশ্চৰ্য্যান্বিত হইত। গ্রামে কোন লোকের বাড়ীতে কুটুম্ব আসিলে, তাহারা এই অদ্ভুত দৃশ্য দেখিতে আসিত। সকলে বলিত যে, সুবালা মনুষ্য নহেন। ইনি লক্ষ্মী অথবা সরস্বতী অথবা স্বয়ং ভগবতী মানুষের আকার ধারণ করিয়া পৃথিবীতে অবতীর্ণ হইয়াছেন।

বাগানের এক পুষ্করিণীতে সুবালা অনেকগুলি বড় বড় রুই মৎস্য পুষিয়া রাখিয়াছিলেন। সুবালার কণ্ঠস্বর তাহারা বুঝিতে পারিত। সানবাঁধা ঘাটে দাঁড়াইয়া সুবালা যখন তাহাদিগকে “আয়, আয়” বলিয়া ডাকিতেন, তখন নিকটে আসিয়া তাহারা হুড়াছড়ি করিত। মুড়ি ও ময়দার গুলি তিনি জলে নিক্ষেপ করিতেন। মৎস্যগণ তাহা ভক্ষণ করিত। ক্রমে তাহারা এত নিৰ্ভয় হইয়াছিল যে, আহারীয় দ্রব্য হাতে করিয়া জলের ধারে বসিলে, সুবালার হাত হইতে তাহারা কাড়িয়া খাইত। একটি রোহিত মৎস্য বড়ই দুৰ্দান্ত হইয়াছিল। সুবালার হাত হইতে সে সমুদয় কাড়িয়া খাইত, অন্য কাহাকেও তাঁহার নিকটে যাইতে দিত না। পক্ষী ও মৎস্যদিগকে প্রথম প্ৰথম সুবালা একেলাই ভোজন প্ৰদান করিতেন। কিন্তু ছাদে যখন অনেক গোল-পায়রা আসিয়া বাস করিল, তখন তাহাদিগকে আহার প্রদান করিবার নিমিত্ত রায়-গৃহিণী একজন বৃদ্ধ স্ত্রীলোক নিযুক্ত করিয়াছিলেন। তাহার দ্বারা এ কাজ ভালরূপে \\ দুনিয়ার পাঠক এক হও! ৩ www.amarboi.comশ্মির্ত্যািক্যনাথ রচনা সংগ্ৰহ