পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দশম অধ্যায় পুণ্ডরীক-সং বিনয় বলিলেন,- “কলিকাতায় আমাদের পাড়ায় পুণ্ডরীকাক্ষ বিদ্যার্ণব নামে একটি লোক আছেন। সকলে তাঁহাকে পুণ্ডৱীক ভট্টাচাৰ্য অথবা ভট্টাচাৰ্য মহাশয় বলিয়া ডাকে। নানা জাতির পুরোহিতাগিরি করিয়া তিনি অর্থে পাৰ্জন করিয়াছেন। তাঁহার একখানি সোনা-রূপার দোকানও আছে। তাহা হইতেও তিনি যথেষ্ট অর্থলাভ করেন। জাতি সম্বন্ধে গোল বাধাইয়াও লোকের নিকট হইতে তিনি টাকা লইতেন। এখন তিনি বৃদ্ধ ও অন্ধ হইয়াছেন। কিন্তু এক সময় আমাদের পাড়ায় তাহার বিলক্ষণ আধিপত্য ছিল। সমাজপতি বলিয়া সকলেই তাঁহাকে মান্য ও ভয় করিত। কথায় কথায় তিনি লোককে জাতিচু্যত করিতেন। অন্যান্য লোক মেষপালের ন্যায় তাহার অনুসরণ করিত। তাহার কারণ এই যে, তিনি নিতান্ত শুদ্ধাচারী ব্ৰাহ্মণ ছিলেন। সকলে বলিত যে, এরূপ সাত্ত্বিক পুরুষ পৃথিবীতে অতি বিরল। বাজারের মিষ্টান্ন কখন তিনি ঘরে আনিতে দিতেন না। কলের জল কখন তিনি ব্যবহার করিতেন না । গঙ্গাজলে তাহার রন্ধন হইত, গঙ্গাজল তিনি পান করিতেন। এখনও তিনি সেইরূপ শুদ্ধাচারী আছেন বটে; কিন্তু তাঁহার মানসন্ত্রম অনেক কমিয়া গিয়াছে। পুণ্ডরীকের গুটিকত গল্প আমি করিব। সেই গল্প শুনিলেই মিথ্যাচরণ, নীচতা ও নিষ্ঠুরতা কাহাকে বলে তাহা তুমি বুঝিতে পরিবে। কলিকাতার নিকট একখানি গ্রামে পুণ্ডরীকের বাস। ফেঁই গ্রামে এক দুঃখিনী অনাথিনী বিধবা ব্ৰাহ্মণী একটি কন্যা লইয়া বাস করিতেন। ব্ৰাহ্মণী তাহার বিবাহ দিতে পারিতেছিলেন না। গ্রামের লোক চাঁদা করিলা169* পুণ্ডরীককে সকলে বিলক্ষণ জনিত হুই”কেমলমাত্র একটি টাকা সকলে তাঁহার নামে ফেলিয়াছিল। এক টাকার অধিক কেহঁইটীহার নিকট প্রার্থনা করে নাই। পুণ্ডৱীকের তাহাতে রাগ হইল। তিনি বলিলেন,- “কি আঁীমার নামে এক টাকা! সামান্য গৃহস্থ লোকেরা যখন কেহ দশ টাকা, কেহ পাঁচ টাকা দিতেছে, তখন আমার নামে কেবল এক টাকা। কন্যাটিকে আমি দুইগাছি সোনার বালা দিব। বরযাত্রীদিগের ভোজনের নিমিত্ত আমি একমণ সন্দেশ দিব।” ব্ৰাহ্মণীর আনন্দের আর সীমা রহিল না। গ্রামের লোক বলিল,— ‘ভট্টাচাৰ্য মহাশয়কে আমরা চিনিতে পারি নাই। বাহিরে উনি কিছু কৃপণ বটেন, কিন্তু ভিতরে উহার দয়া আছে।’ ফলকথা, সকলেই পুণ্ডরীককে ধন্য ধন্য করিতে লাগিল। গ্রামের ময়রাকে ব্ৰাহ্মণী একমণ সন্দেশের আজ্ঞা করিলেন। যথাসময়ে পুণ্ডরীক' তাহাকে দুইগাছি সোনার বালা আনিয়া দিলেন। বিবাহের পরম পরিতোষ লাভ করিল। বরকর্তা বারোয়ারি প্রভৃতির টাকা তাঁহার হস্তে অর্পণ করিলেন। পরদিন পুণ্ডৱীক কলিকাতায় প্রত্যাগমন করিলেন। পুণ্ডৱীক এখন বৃদ্ধ হইয়াছেন। বারোয়ারি প্রভৃতির টাকা আজ পৰ্যন্ত গ্রামের লোক তাঁহার নিকট হইতে আদায় করিতে পারে নাই। কিছুদিন পরে প্রকাশ হইল যে, কন্যাকে তিনি যে সোনার বালা প্ৰদান করিয়াছিলেন, তাহা প্ৰকৃত সোনার নহে, গিল্টির বালা। যাহা হউক বরকর্তা ভদ্রলোক। দুঃখিনী বিধবা ব্ৰাহ্মণীকে আর পীড়ন করিলেন না। সন্দেশের মূল্য পুণ্ডরীক ময়রাকে দিলেন না। তিনি নিজে ময়রাকে আজ্ঞা করেন নাই, তাহার কথামত ব্ৰাহ্মণী আজ্ঞা করিয়াছিলেন। সেজন্য ময়রা পুণ্ডৱীককে ধরিতে পারিল না। গরীব ব্ৰাহ্মণী সেই টাকা অতিকষ্টে ক্রমে ক্রমে পরিশোধ করিলেন। পাপের পরিণাময় ԳՀն: sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro