পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মালী উপর হইতে একগাছি দড়ি নীচে নামাইয়া দিল, অপর দিক সে ধরিয়া রহিল। দড়ি ধরিয়া সে লোক পুনরায় ডুব দিল। কূপের ভিতর যাহা তাহার হাতে ঠেকিয়াছিল, তাহাতে সে দড়ি বঁধিয়া দিল। পুনরায় জল হইতে মাথা তুলিয়া উপরের লোককে সেই দড়ি টানিতে বলিল। নয় দশ বৎসরের বালিকার কঙ্কাল। সমস্ত না হউক, অনেকটা উপরে আসিয়া উঠিল। হাতের অস্থিতে এখনও গাছ কয়েক কাচের চুড়ি ছিল। চপলার হাতে সেই চুড়ি ছিল। সুবালা তাহা চিনিতে পারিলেন। সে সমুদয় যে চপলার অস্থি, সে বিষয়ে আর কোন সন্দেহ রহিল না। কঙ্কাল হইতে যে হাড়গুলি বিচ্ছিন্ন হইয়াছিল, ক্রমে সেগুলি উপরে উঠিল। যে লীেহ-কন্টকের গুচ্ছ বড়ালমহাশয়ের হাত হইতে পড়িয়া গিয়াছিল, তাহাও উপরে উঠিল। কূপের ভিতর আর কিছু ছিল না। সমুদয় অনুসন্ধান করিয়া কূপের ভিতর যে নামিয়াছিল, সে উপরে আসিয়া গ্রামে হুলস্থূল পড়িয়া গেল। এই আশ্চৰ্য্য ব্যাপার দেখিবার নিমিত্ত গ্রামের লোক ভাঙ্গিয়া পড়িল। চপলার মাতা দৌড়িয়া আসিল । ছাদের উপর পাগলী পায়রাদিগকে খাবার দিতেছিল। মায়ের ক্ৰন্দন শুনিয়া সেও দৌড়িয়া আসিল । হাতের অস্থিতে কাচের চুড়ি যে চপলার গোয়ালিনীও তাঁহা চিনিতে পারিল। বলা বাহুল্য যে, চপলার মাতা কূপের ধারে বসিয়া কঁদিতে লাগিল। বড়ালমহাশয়ের আজ্ঞায় কৃপটি এবার মাটি ফেলিয়া ভরাট করা হইল। চপলা যে দৈবের ঘটনায় কূপে পড়িয়া প্ৰাণ হারাইয়াছে, একথা বিশ্বাস করিতে গ্রামের লোকের প্রবৃত্তি হইল না। খাদা ভূত যে তাহাকে এ বিশ্বাস তাঁহাদের মন হইতে দূর হইল না। গ্রামের একজন প্ৰধান বিজ্ঞলোক গম্ভীর — “ভুত হাওয়া ব্যতীত আর কিছুই নহে। মৃত্তিকা, ইট, তক্তা প্রভৃতি ভেদ অনায়াসে তাহারা কূপের ভিতর প্রবেশ করিতে পারে। উপরে বন্ধ থাকিলে কি হয় শরীরের সমস্ত মাংস ভক্ষণ করিয়াছিল। কেবল মোটা মোটা হাড় ক’খানা নাই বলিয়া কূপের ভিতর ফেলিয়া গিয়াছিল। কাটা বাছিয়া তোমরা কইমাছ কি কৰেিখও নাই? হাড় বাছিয়া খাদা ভূত সেইরূপে চপলাকে খাইয়াছিল। তোমরা যেমন কড়াই ভাজা খাও, ছোট ছোট হাড়গুড়ি সেইরূপ সে কুডু কুড় করিয়া খাইয়াছিল।” এ সঙ্গত কথা বটে। বড়ালমহাশয়ের অনুমান নিতান্ত অসঙ্গত! সেজন্য খাদা ভূত যে চপলাকে খাইয়াছে—সকলের মনে সেই বিশ্বাস বদ্ধমূল রহিল। জীয়ন্ত মানুষ খাদা ভূত বাড়ীর ভিতর চের-কুঠুরীতে যে বসিয়া আছে, গ্রামের লোক তাহার কিছুই জানে না। সুবালা বড়ালমহাশয়কে জিজ্ঞাসা করিলেন, — “খাদা ভূত ও শাকচুন্নির সমস্যা মীমাংসা হইল। কিন্তু শুনিয়াছি যে, দিদিমণির পীড়ার সময় দিনকত গ্রামে ঘোরতর তুকতাকের উৎপাত হইয়াছিল। তুকের ভয়ে গ্রামের লোক গ্রাম ছাড়িয়া পলাইবার উপক্ৰম করিয়াছিল। সে কে করিয়াছিল? সকলে বলে যে, আপনার আজ্ঞায় সে সব কাজ হইয়াছিল।” বড়ালমহাশয় উত্তর করিলেন,- “তুকতাক গুণ-গান আমরা জানি না। গ্রামের লোককে ভয় দেখাইবার জন্য ধনুকধারী তামাসা করিয়া নেকড়ার পুঁটুলি প্রভৃতি পথে ফেলিত। তাহা আগে আমি জানিতাম না। পরে জানিতে পারিয়া ধনুকধারীকে অনেক ভৎসনা করিয়াছিলাম। গীেরবিনী তিওরিণীর যখন উপাৰ্জ্জন কমিয়া আসিল, তখন সেও অন্য গ্রামের এই কাজ করিয়া আসিত ।” izejag ifşeify sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro e\9e