পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম অধ্যায় এখানে রায়মহাশয়ের বাটীতে সোনা-বীে মূৰ্ছিত হইয়া পড়িয়া আছেন। পিসীমা ও বড়ালগৃহিণী তাঁহার সেবা-শুশ্রুষা করিতেছেন। তাঁহার নাসিকপথে ঘড়ঘড় শব্দে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসক্রিয়া সম্পাদিত হইতেছে। মাঝে মাঝে তাহার। সৰ্ব্বশরীর কম্পিত হইতেছে। মাঝে মাঝে তাহার দাঁতকপাটি লাগিতেছে। বিজয়বাবু, বড়ালমহাশয় ও অন্যান্যা লোক তাঁহাকে সচেতন করিবার নিমিত্ত নানা উপায় অবলম্বন করিতেছেন। কিছুতেই তাঁহার জ্ঞান হইতেছে না। চক্ষু বুজিয়া তিনি পড়িয়া আছেন। সন্ধ্যার পর ডাক্তার আসিলেন। রোগিণীকে দেখিয়াই তিনি বলিলেন যে, তাহার জীবনের কিছুমাত্র আশা নাই। শীঘ্রই তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হইবেন । তথাপি তিনি ঔষধাদির ব্যবস্থা করিলেন। তিনি যেরূপ উপদেশ প্ৰদান করিলেন, সকলে সেইরূপ কাজ করিতে লাগিলেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হইল না। রাত্রি হইল। রোগিণীর জ্ঞান হইল না, একেবারও তিনি চক্ষু চাহিয়া দেখিলেন না। মাঝে মাঝে কেবল দুই একটি কথা বিড় বিড় করিয়া তাঁহার মুখ হইতে বাহির হইতে লাগিল। সে কথা কি, ভালরূপ কেহ তাহা বুঝিতে পারিল না। কেবল “রাজাবাবু” এই কথাটি সকলে বুঝিতে পারিল। রাত্রি প্রায় দুই ঘণ্টা হইল। সোনা-বীেয়ের অ দাঁতকপাটি আর কেহ ভাঙ্গিতে পারিল না। ঘন ঘন র কম্পিত হইতেছিল। সে কম্পন ক্রমে । ঘড়ঘড় শব্দে সবলে নিঃশ্বাস-প্ৰশ্বাস ঠুক্রমে উপরে উঠতে লাগিল। নাভি, বক্ষঃস্থল ও ৱিষ্ট ও স্থির হইল। সোনা-বীেয়ের প্রাণবায়ু বাহির হইয়া ଦ୍ବିତ আজ সোনা-বীে শান্তি পাইলেন। তাঁহার তাপিত হৃদয় আজ শীতল হইল। যাহার সুখ ঐশ্বৰ্য দেখিয়া লোকে হিংসা করিত, যিনি এই গ্রামের রাজরাজেশ্বরী ছিলেন, হায়! আজি অনাথিনী পাগলিনী হইয়া তিনি এই বাটীতে প্ৰবেশ করিয়াছিলেন। তাহার মৰ্ম্মভেদিনী খেদোক্তি শুনিয়া আজ সকলের হৃদয় বিদীর্ণ হইয়াছিল। পাপের পরিণাম এইরূপ হয়। মনে যাহা চিন্তা করি—“মনসা বাচা হস্তাভ্যাং পদূভ্যামৃদরেণ-সে সমুদয় বোমে অঙ্কিত হইয়া থাকে। কিছুই বৃথা হয় না। যথাকলে সেই সমুদয় কৰ্ম্ম, সুখ ও দুঃখ উৎপাদন করে। যেমন এক একটি মানুষের, সেইরূপ এক একটি সম্প্রদায়ের, এক একটি জাতির উন্নতি ও অবনতির কারণ তাহারা হয়। হে বাঙ্গালী! একবার তোমার দুৰ্দশার কারণ ভাবিয়া দেখ। তোমার দুৰ্গতির জন্য অন্যের প্রতি দোষারোপ করিও না। একবার নিজের প্রতি চাহিয়া দেখ। মনে করিও না যে, আধুনিক কৰ্ম্মদোষে তোমাদের এই দুৰ্দশা ঘটিয়াছে। শত শত বৎসরের সঞ্চিত পাপে আৰ্যসমাজ গলিত পচিত হইয়াছিল; তবে তো জনকয়েক বিদেশী আসিয়া তোমাদের দেব মন্দির সকল চূৰ্ণ করিতে সমর্থ হইয়াছিল। আজ নূতন নহে, নয় শত বৎসর পূৰ্ব্বে ভারতের গীেরব-রবি অস্তাচলের তিমিরে ডুবিয়া গিয়াছে। হায় হায়! সেই অন্ধকারে এখনও ডুবিয়া আছে, আর উদয় হয় নাই। তাই হে বাঙ্গালী! তোমাকে মিনতি করিয়া বলি,-কখন সত্যপথ হইতে বিচলিত হইও না। কৰ্ত্তব্যসাধনে কখন অবহেলা করিও না । বালক-বালিকাগণ! তোমরা যখন বড় হইবে, তখন ዓGኩr দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboicom';**