পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপরে জাগিয়াছিল। ইহার চারিদিকে অনেকগুলি বৃহৎ ও শুষ্কপত্র নিম্নমুখ হইয়া ঝুলিতেছিল। একটি পুরাতন ও জীর্ণ রজ্জ্ব দ্বারা ধনুকধারী এই তাল গাছে নীেকা বন্ধন করিল। পুনরায় সুরা পান করিয়া সুবালার নিকট সে আসিয়া বসিল। তাহার পর নিজের কথা যথাসাধ্য মিষ্ট করিয়া সে বলিতে লাগিল,— “সুবালা! তোমার মনে আছে, আমি সেদিন কি বলিয়াছিলাম? কি করিব বল, আমার মনকে আমি সুস্থির করিতে পারিতেছি না। তোমাকে যদি না পাই, তাহা হইলে আর কোন বস্তুতেই আমার প্রয়োজন নাই। আমি নিশ্চয় বলিতেছি যে, তোমা ছাড়া হইয়া আমি এ প্রাণ রাখিব না। সেই জন্য আমি ছোরা প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছি। এই দেখ সে ছােরা। সৰ্ব্বদা ইহা আমার বুকের উপর থাকে। কথার কথা নহে। আমি দৃঢ়সঙ্কল্প করিয়াছি, তোমা ছাড়া হইয়া এ ছার প্রাণ আমি রাখিব না। তুমি দয়াময়ী। মানুষ দূরে থাকুক, পশু পক্ষী কীট পতঙ্গ সকল জীবের প্রতি তোমার দয়া অসীম। কিন্তু আমার প্রতি কি তোমার বিন্দুমাত্র দয়া হয় না। ছেলেবেলার কথা স্মরণ করা। চিরকাল আমরা এক সঙ্গে। যখন যাহা বলিয়াছ, তখন তাহা আমি করিয়াছি। আমার প্রতি তখন তোমার কত স্নেহ-মমতা ছিল। সে স্নেহ-মমতা এখন কোথায় গেল। ঝোঁকড়া-চুলো ছোড়া কে যে, আমার কােছ হইতে তোমাকে সে কাড়িয়া লইল? চল সুবালা আমরা কলিকাতা যাই। সে স্থানে গিয়া, চল আমরা অন্য ধৰ্ম্মে দীক্ষিত হই। খৃষ্টীয় ধৰ্ম্ম আছে, ব্ৰাহ্ম-ধৰ্ম্ম আছে, আৰ্য-নামক আর এক প্রকার নূতন ধৰ্ম্মের আবির্ভাব হইয়াছে। এক ঈশ্বরের ভজনা করিতে এই সকল ধৰ্ম্মে উপদেশ প্ৰদান করে। ইহারা নদী নালা, গাছ পালা, নোড়া-নুড়ি, গরু বঁােদর পূজা করিতে বলে নূর। শোকাকুলা মাতা অথবা ভগিনীকে ইহারা জীয়ন্ত ধরিয়া পোড়াইতে বলে না। বলে যে, ভগবানের চক্ষে সকল মানুষ সমান। কিন্তু আমাদের ধৰ্ম্ম দেখা জনকয়েকহঁড়া পৃথিবীর যাবতীয় মানুষকে তুমি ঘূণা করিবে,-আমাদের ধৰ্ম্মে এই রূপ শিক্ষা প্ৰদ । অমুক কায়স্থ, উহাকে অল্প ঘূণা করিবে: অমুক সদৃগােপ, উহাকে তাহা অপেক্ষ ভূধৰ্ক ঘৃণা করিবে; অমুক নীচ জাতি, উহাকে স্পশ পৰ্যন্ত করবে না। নীচ জাতিরা ধৰ্ম্মঞ্জী অধ্যয়ন করিতে পারবে না। সৃষ্টিস্থিতি প্ৰলয়কৰ্ত্তার সজেক্ষপ নাম পৰ্যন্ত ইহারা উচ্চারণ "করিতে পারিবে না। ভগবানকে ইহারা ডাকিতে পরিবে: না। ইহারা পয়সা দিবে, ইহাদের হইয়া আর এক জন ভগবানের পূজা করিবে। ইহারা অন্য জাতির দাসত্ব করিবে। ইহাই আমাদের ধৰ্ম্মের শিক্ষা। কিন্তু আর অধিক দিন লোকে এ দৌরাত্মা সহ্য করবে না। দক্ষিণে পরয়া, তিয়া প্রভৃতি জাতি ক্ষেপিয়া উঠিয়াছে। পূৰ্ব্বদেশে নমঃশূদ্র জাতিরা ক্ষেপিয়াছে। কলিকাতায় আমাদের কায়েতরা ক্ষেপিয়াছে। এখন আর তাহারা ব্ৰাহ্মণ দেখিয়া প্ৰণাম করে না। গলায় একগাছা সূতা পরিয়া, গোপে চাড়া দিয়া আমাদের কায়েতরা এখন তাল ঠুকিয়া বেড়াইতেছে। “মানুষকে ঘৃণা কর,”— বলিতে গেলে ইহাই আমাদের ধৰ্ম্মের সার। কিন্তু প্ৰকৃত ইহা ধৰ্ম্ম নহে, পাপ। এই পাপের ফলে আমাদের কি দুৰ্গতি হইয়াছে, তাহা দেখ। তুমি ভূগোল পড়িয়াছ, ইতিহাস অধ্যয়ন করিয়াছ। বল দেখি, এরূপ জাতি পৃথিবীতে আর কোথায় আছে? সেই জন্য তোমায় বিনয় করিয়া বলি যে, চল সুবালা, আমরা কলিকাতা যাই। সে স্থানে গিয়া আমরা অন্য ধৰ্ম্ম অবলম্বন করি। সেই ধৰ্ম্ম অনুসারে আমরা বিবাহ করিব। তাহার পর আমরা পরম সুখে দিনযাপন করিব। তুমি মিথ্যা কথা বলিতে জান না। আমি নিশ্চয় জানি যে, একবার তুমি হাঁ” বলিলে, সে কথার কখন আর অন্যথা হইবে না। বল, সুবালা, আমার প্রতি দয়া করিয়া বল যে, তুমি এ কাজ করবে। তাহা হইলে মুহূৰ্ত্তে নীেকা লইয়া আমি বাড়ী যাই। তাহার পর কল্য প্ৰাতঃকালে দুই জনে কলিকাতা দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comf"ঙলাকনাথ রচনাসংখ্যক اوماه