পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই কথা বলিয়া ধনুকধারী প্রথম নীেকার পশ্চাদৃভাগে গমন করিল! বোতল বাহির করিয়া পুনরায় সুরা পান করিল। তাহার পর টলিতে টলিতে নীেকার মধ্যস্থলে আসিয়া বসিল । বক্ষঃস্থল হইতে ছোরা বাহির করিয়া তাহার আঘাতে তক্তা কাটিয়া নীেকার ঠিক মধ্যস্থলে একটা ছিদ্ৰ করিল। সেই ছিদ্রপথে কল কল শব্দে নীেকার ভিতর জল প্ৰবেশ করিতে লাগিল । তাহার পর সুবালার নিকট পুনরায় সে আসিয়া বসিল। পকেট হইতে সিগারেটের বাক্স ও দিয়াসলাই বাহির করিয়া একটি সিগারেট ধরাইয়া তাহার ধূমপান করিতে লাগিল। সিগারেটের ধূমপান করিতে করিতে ধনুকধারী বলিতে লাগিল,- “ছিদ্ৰ দিয়া যে পরিমাণে জল উঠিতেছে, তাহাতে বোধ হয় যে, আধা ঘণ্টার ভিতর নীেকা জলমগ্ন হইবে। আধা ঘণ্টা মাত্র আমাদের পরমায়ু আছে। আধা ঘণ্টা পরে আমরা দুই জনে পরমেশ্বরের নিকট গিয়া দাঁড়াইব । তিনি বিচার করিবেন। তাঁহার নিকট জাতিবিচার নাই। তোমার প্রতি আমার কিরূপ অসীম ভালবাসা, তাহা তিনি দেখিবেন। কুসংস্কারের বশবৰ্ত্ত হইয়া তুমি আমার এই ভালবাসা তুচ্ছ করিলে। বাল্যকালের বন্ধুকে পরিত্যাগ করিয়া ঝোঁকড়া-চুলোকে তুমি মনােনীত করিলে। এই পাপের জন্য ইহকালে অল্প বয়সে তুমি মৃত্যুমুখে পতিত হইলে। এই হইল তোমার প্রথম দণ্ড। পরকালে কুন্তীপাক, রৌরব প্রভৃতি নরকে তোমাকে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করিতে হইবে। সুবালা কোন উত্তর করিলেন না। মনে মনে তিনি কেবল ভগবানকে ডাকিতে লাগিলেন,- “হে জগদীশ্বর! আমি বালিকা। বঁচিয়া থাকিতে আমার বাসনা আছে। কিন্তু আমার পক্ষে কি ভাল, কি মন্দ, তুমি তাহা জািন, আমি জানি না। আজ আমার মৃত্যু হইলে, যদি ভাল হয়, তবে উপায় আসিয়া উপস্থিত হউক। তুমি যাহা করি আমার মঙ্গলের জন্যই করিবে,- সেই বিশ্বাস আমার মনে, হে প্ৰভো! দৃঢ়ীভূতুড়ের্ক। যদি মৃত্যুই আমার পক্ষে শ্ৰেয়ঃ হয়, তাহা হইলে আমার মন হইতে মৃত্যুভয় দূর তোমার প্রতি আমার হৃদয়ে অসীম ভক্তি হউক, মৃত্যুকে তুচ্ছ করিবার নিমিত্ত আমার श्छक।" কল কল শব্দে নীেকার ভিতর জলপ্ৰবেশ করিতে লাগিল । ধনুকধারী নীেকার পশ্চাদৃভাগে গিয়া পুনরায় মদ্য পান করিল। তাহার পর সুবালার নিকট প্রত্যাগমন করিয়া সিগারেটের ধূমপান করিতে করিতে সে বলিতে লাগিল,—“এ প্রাণ রাখিব না বলিয়া ছোরা গড়াইলাম। কিন্তু তখন মনে করিয়াছিলাম যে, আমি একেল মরিব, তোমাকে কিছু বলিব না। ঝোঁকড়া-চুলোর সঙ্গে যে দিন তোমার বিবাহ হইবে, সেই দিন আমি মরিব । এইরূপ মনে মনে সঙ্কল্প করিয়াছিলাম। কিন্তু আজ সন্ধ্যাবেলা মন্দিরের সম্মুখে আমগাছে বসিয়া যখন তোমাকে দেখিতেছিলাম, তখন ভাবিলাম যে,-আমি একেলা মারি কেন? ঝোঁকড়া হইয়াছে, এই নিৰ্জ্জন শিবমন্দিরে কেহ নাই। সুবালাকে ধরিয়া এক সঙ্গে জলে ঝাঁপ দিব। — এইরূপ ভাবিতেছি, এমন সময় তুমি জাগরিত হইয়া কাদাড়ের ধারে গমন করিলে। তাড়াতাড়ি গাছ হইতে নামিয়া, নীেকা লইয়া তোমার নিকট আমি উপস্থিত হইলাম। তুমি আপনি আমার নীেকায় উঠিয়া বসিলে। সমস্ত বিধাতার খেলা।” সুবালা কোন উত্তর করিলেন না। নীরবে বসিয়া তিনি ভগবানকে ধ্যান করিতে লাগিলেন। কল কল শব্দে নীেকার ভিতর জল প্ৰবেশ করিতে লাগিল। নীেকা ক্রমেই জলমগ্ন হইবার উপক্রম হইল। ԳՆԵ দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com4ির্জািকস্তানাথ রচনা সংঘই