পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৮০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যে, এ জীব কেবল যে রক্তপান করে, তাহা নহে, ইহার ভয়ানক বিষও আছে। তখন অবশিষ্ট দুইজন মাঝির সহিত আমি দৌড়িয়া নীেকায় গিয়া উঠিলাম ও তৎক্ষণাৎ নীেকা ছাড়িয়া দিয়া সে স্থান হইতে পলায়ন করিলাম। নীেকায় বসিয়া আমি ভাবিতে লাগিলাম। মনে করিলাম যে, মোহর বিক্রয়ের টাকাগুলি বুঝি জলাঞ্জলি দিলাম, পাপের ধন বুঝি প্ৰায়শ্চিত্তে গেল। এখন বুঝিতে পারিলাম যে, পাচ হাজার টাকার সম্পত্তি কেন সে লোক এক হাজার টাকায় বিক্রয় করিয়াছে। যে জীবটিকে লাঠি দিয়া মারিয়াছিলাম, যাহার মৃতদেহ আমি তুলিয়া লইয়াছিলাম, তাহা এখন পৰ্যন্ত আমার হাতেই ছিল। নীেকায় উপর রাখিয়া সেইটিকে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতে লাগিলাম। কিছুক্ষণ উল্টাইয়াপাল্টাইয়া আমি ঘোরতর আশ্চৰ্য্যান্বিত হইলাম। দেখিলাম যে, —সে অন্য কোন জীব্য নহে, বৃহৎ মশা! চড়াই পাখীর ন্যায় বৃহৎ মশা! মশা যে এত বড় হয়, তাহা কখন শুনি নাই। শরীরটি চড়াই পাখীর ন্যায় বড়, ঔডুটি বৃহৎ জোকের ন্যায়। ডাক্তারেরা যেরূপ ছুরি দিয়া ফোঁড়া কাটে শুড়ের আগায় সেইরূপ ধারালো পদাৰ্থ আছে। জীব-জন্তু অথবা মানুষের গায়ে বসিয়া প্ৰথম সেই ছুরি দিয়া কতক চৰ্ম্ম ও মাংস কাটিয়ালয়। তারপর সেই স্থানে তঁড় বসাইয়া রক্তপান করে। কেবল যে রক্তপান করিয়া জীবজন্তুর প্রাণ বিনষ্ট করে তাহা নহে, ইহাদের ভয়ানক বিষ আছে, সেই বিষে অপর প্রাণী ধড়ফড় করিয়া মরিয়া যায়। লম্বোদর জিজ্ঞাসা করিলেন,- “কি করিয়া জানিলে যে, সে জীব কোন নূতন প্রকার পক্ষী নহে?” ডমরুধর উত্তর করিলেন,- “পক্ষীদের দুইটি ইহার ছয়টি পা; পক্ষীদের ডানায় পালক ছিল না; পক্ষীদের ঠোঁট থাকে, ঠোঁটের ইহার ঔড় ছিল; পক্ষীদের শরীরে হাড় থাকে, ইহার শরীর কাদার ন্যায় নরম। আমি স্থির করিলাম যে, ইহা পক্ষী নহে, মশা ।” ঢ় হয়, তাহা আমার বিশ্বাস হয় না।” হইবে না? হন্তী বৃহৎ মশা ব্যতীত আর কিছুই নহে। মশার শুড় আছে, হন্তীরও ভঁড় আছে। তবে হন্তী যদি রক্তপান করিত, তা হইলে পৃথিবীতে অপর কোন জীব জীবিত থাকিত না । সেইজন্য হস্তী গাছপালা খাইয়া প্ৰাণধারণ করে।” ডমরুধর বলিলেন,- “তাহা ভিন্ন আমি এ কথায় প্রমাণ রাখিয়াছি। যেমন সেই বাঘের ছালখানি ঘরে রাখিয়াছি, সেইরূপ এই মশার প্রমাণস্বরূপ আমি জোক রাখিয়াছি। আমাদের গ্রামের নিকট যে বিল আছে, মশার ঔড়টি কাটিয়া আমি সেই বিলে ছাড়িয়া দিয়াছিলাম। সেই ভঁড় হইতে এখন অনেক বড় বড় জোক হইয়াছে। আমার কথায় তোমাদের প্রত্যয় না। হয়, জলায় একবার নামিয়া দেখ। প্রমাণ ছাড়া আমি কথা বলি না।” লম্বোদর বলিলেন, — “মশার ভঁড় পচিয়া জোক হইতে পারে না।” শঙ্কর ঘোষ বলিলেন,- “কেন হইবে না? স্বেদ হইতে স্বেদাজ জীব হয়। বাদাবনের পাতা পচিয়া চিংড়ি মাছ হয়। কোন বিএ অথবা এমএ অথবা কি একটা পাশ করা লোক কৃষিকাৰ্য সম্বন্ধে একখানা বাঙ্গালা স্কুলপাঠ্য পুস্তক লিখিয়াছিলেন । পুদিনা গাছ সম্বন্ধে তাহাতে তিনি এরূপ লিখিয়াছিলেন, —একখণ্ড দাঁড়িতে গুড় মাখাইয়া বাহিরে বঁাধিয়া দিবে। গুড়ের লোভে তাহাতে মাছি বসিয়া মলত্যাগ করবে। মাছির মলমূত্রে দড়িটি যখন পূর্ণ হইবে, তখন সেই দড়ি রোপণ করিবে। তাহা হইতে পুদিনা গাছ উৎপন্ন হইবে। মক্ষিকার বিষ্ঠায় যদি পুদিন গাছ

          • ত দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com ~ troo