পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৮৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হইয়াছিলাম। ব্যাঘ চলিয়া গেলে কিছুক্ষণের নিমিত্ত সেই স্থানে নিজীবি হইয়া পরিয়া রহিলাম। তাহার পর আস্তে আস্তে উঠিয়া এদিক-ওদিক চাহিয়া দেখিলাম। নিকটে একখানি গ্রাম দেখিয়া তাহার ভিতর প্রবেশ করিলাম। গ্রামখানি ছোট, কেবল ইতরলোকের বাস। গ্রামবাসীদিগকে জিজ্ঞাসা করিয়া অবগত হইলাম যে, সে স্থান হইতে আমার আবাদ দূর, কেহ তাহার নামও জানে না। বরং আমার গ্রাম নিকট, সাত-আট ক্রোশ মাত্র। তপস্যা করিতে যখন আমি বনে গমন করি, তখন টাকা-কড়ি সঙ্গে লইয়া যাই নাই। সে নিমিত্ত নীেকা অথবা শালতি ভাড়া করিতে পারিলাম না। পদব্ৰজেই আমার গ্রাম অভিমুখে আমি চলিলাম। আকাশভ্ৰমণে, অনাহারে, নানারূপ ভাবনাচিন্তায় আমার পা আর উঠে না। তাহার পর বর্ষার শেষ। নদী-নালা জলে ও মাঠ-ঘােট কাদাকিচায় পরিপূর্ণ। বড়ই কষ্ট হইতে লাগিল। যাইতে যাইতে এক মাঠের মাঝখানে সন্ধ্যা হইয়া গেল। এখন কোথায় যাই। আর একটু আগে গিয়া মাঠের মাঝখানে নারিকেলপাতায় আচ্ছাদিত সামান্য একখানি চালা দেখিতে পাইলাম। সেই স্থানে গিয়া উপস্থিত হইলাম। জনমানবকে সে নালায় দেখিতে পাইলাম না। প্রাঙ্গণে শস্যা গাছের এক মাচা ছিল। অনেকগুলি দুধে-শসা তাহা হইতে ঝুলিতেছিল। পেট ভরিয়া আমি সেই শস্যার অতি খাইলাম। কিঞ্চিৎ সুস্থ হইয়া আমি চালার ভিতর প্রবেশ করিলাম। গোটাকতক মেটে হাঁড়ী ভিন্ন তাহার ভিতর আর কিছু দেখিতে পাইলাম না। চালার একপার্শ্বে ছেচা বঁাশ দিয়া গঠিত একটি তক্তাপোষের মত ছিল। তাহার উপর একটা ছেড়া মাদুর ও ময়লা বালিশ ছিল । ঘোর ক্লান্তিতে কাতর হইয়া আমি উপর শুইয়া পড়িলাম। সন্ধ্যা হইল। অন্ধকার হইল । সেই সময় 愛 আছে। মাঝে মাঝে এ অঞ্চলে অনেকুঞ্জঈড় মজুরি করিতে আসে। আমি বুঝিলাম যে, টুর্গলার সাড়া দিলাম। সে আমার দিকে চাহিয়া দেখিল। ক বলিলাম যে,- বাঘের মুখ হইতে আমি অতি কষ্টে বাঁচিয়া সে স্থানে আসিয়াছি। আর পথ চলিতে পারি না। রাত্রিযাপনের নিমিত্ত তাহারা যদি একটু স্থান প্ৰদান করে, তাহা হইলে আমার বড় উপকার হয়। সাধে কি এলোকেশীর মনে সৰ্ব্বদা আমার প্রতি সন্দেহ! আমার গায়ের বর্ণটি কৃষ্ণঠাকুরের চেয়ে কালো। বাঘ মিথ্যাকথা বলে নাই—শরীরের ভিতর কেবল খানকতক হাড়। মাথার মাঝখানে কিন্তু এমন চকচকে টাক আর কার আছে? প্ৰকাণ্ড টাকা। টাকের চারিদিকে পাকা চুল, মুখের দুই পাশে সাদা ফেকো। দাঁত একটিও নাই। তথাপি আমার কিরূপ একটা শ্ৰী-ছাঁদ আছে, কিরূপ একটা লাবণ্য আছে যে, তাতে রাহুরও ভুল হয়। আর ম্যাগীগুলোও আমার গায়ে যেন ঢলিয়া পড়ে। অবাক হইয়া ধাঙ্গড় মাগী আমার টাক পানে চায়, আর মুচকে মুচকে হাসে। শেষে সে কেবল দুইটি কথা বলিল,— “মাঝি আসুক।” তোমাদের যেমন ‘বাবু, ইহাদের সেইরূপ সম্মানসূচক উপাধি “মাঝি।” কিছুক্ষণ পরে একটা হোৎকা মিনসে চালার ভিতর প্রবেশ করিল। তোমরা আমাকে কালো বল, কিন্তু তার রঙ্গের তুলনায় আমি তো ফিটু গৌরবর্ণ। সে আসিয়া যেই আমার দিকে দৃষ্টিপাত করিল, আর বামহাতে আমার মাথা নেওয়াইয়া দক্ষিণ হাতে আমার পিঠে বজ্ৰসম দুইটা কিল বসাইয়া দিল। গন্ধ পাইয়া আমি বুঝিলাম যে, ধাঙ্গড় মদ খাইয়াছিল। ডম্বক্ষ-চরিত দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com ~ ኩrv©ፃ