পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৮৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম পরিচ্ছেদ সেই দিন হইতে আমার রোগ দূর হইয়া গেল। জুর গেল। দিন দিন শরীরে বল পাইতে লাগিলাম। রোগের পর আমার যেন নূতন শরীর হইল। এখন মা যে নূতন বুদ্ধিটুকু আমাকে দিয়াছেন, তাহা খেলাইয়া হীরকের দাশগুণ টাকা আদায় করিতে আমি চেষ্টা করিতে লাগিলাম। একদিন বসিয়া বুদ্ধি খেলাইতেছি এমন সময় আমার মনে কোন বিষয় উদয় হইল। আমি একটু হাসিয়া ফেলিলাম। এলোকেশী জিজ্ঞাসা করিলেন, — “হাসিতেছ। কেন?” আমি বলিলাম,- “চুপ কর। বুদ্ধি পাকিয়া আসিতেছে।” খুলনা জেলায় বাঘেরহাটের নিকট নীলামে আমি এক মহল কিনিয়াছিলাম। তাহা লইয়া আজ কয়েক বৎসর ধরিয়া ত্রিশঙ্কুবাবুর সহিত মোকদ্দমা চলিতেছিল। অন্য বিষয়ে আমি টাকা খরচ করি না বটে, কিন্তু মোকদ্দমার জন্য টাকা খরচ করিতে কখনও কাতর হই না। এক একটা দলিল জল করাইতে আমি পাঁচশত টাকা ব্যয় করি । এক একজন মিথ্যা মোকদ্দমা আমি যেমন শিখাইতে পারি, এমন আর কেহ পারে না। আদালতে হলফ করিয়া আমি নিজে যখন মিথ্যা সাক্ষ্য প্ৰদান করি, তখন কোন উকীল জেরা করিয়া আমাকে ঠকাইতে পারে না। ত্রিশঙ্কুবাবু আমার সহিত পরিবেন কেন? দুটা আদালতে তিনি হারিয়া গিয়াছিলেন। মহলের এক স্থানে বনের ভিতর প্রাচীন ইটে গাথা প্রাচীর ও শানের চাতাল ছিল। সেই চাতালের কথা আমার মনে পড়িল। আমি তায় যাইলাম। কোন লোককে টাকা দিয়া একখানি তামার পাতে সেকালের বাঙ্গ ঠাষীয় অনেকগুলি কথা ক্ষোদিত করাইলাম। তাহা লইয়া ঘিটটু ধাঙ্গড়ের সহিত আমিৰ্থঘেরহাট মহলে গমন করিলাম। ঘিটটুকে সেই করিত্যুেৰ্বেলিলাম। গাছের ডালপালা দিয়া তাহার উপর সে এক সেই পথ দিয়া গমন করেন। আমি টােপ ফেলিলাম। ত্ৰিশন্ধুবাবু এখন কি করেন, তাহা দেখিবার নিমিত্ত আমি খুলনায় আসিয়া বাসা ভাড়া করিয়া বসিয়া রহিলাম। একদিন প্ৰাতঃকালে ত্রিশঙ্কুবাবু মহলের নিকট সেই পথ দিয়া যাইতেছিলেন। তিনি দেখিলেন যে, ঘিটটু ধাঙ্গড়ের বৃদ্ধ মাতা ছােট একখানি তামার পাত মাজিয়া পরিষ্কার করিতেছে। ত্রিশঙ্কুবাবু তাহাতে জিজ্ঞাসা করিলেন,— “তোর হাতে ওটা কি?” বৃদ্ধা উত্তর করিল,— “জানি না বাবু কি! উনুন করিবার নিমিত্ত চাতালের শান খুঁড়িতে খুঁড়িতে এইটা আমি পাইয়াছি।” ত্রিশঙ্কবাবু হাতে করিয়া দেখিলেন । পুরাতন বাঙ্গালা ভাষায় তাহাতে যে কথাগুলি লেখা ছিল তাহার একটু দেখিয়াই তিনি চমকিত হইলেন। একটাকা দিয়া তাহার পাতটি বৃদ্ধার নিকট হইতে তিনি কিনিয়া লইলেন। তাহার পরদিন খুলনায় বাসায় তিনি আমার নিকট আসিয়া বলিলেন, — “ডমরুধীরবাবু সামান্য ঐ মহিলটা লইয়া মিছামিছি। আর মোকদ্দমা কেন? আপনারও টাকা খরচ হইতেছে, আমারও টাকা খরচ হইতেছে। দুইশত টাকায় আপনি মহলটি কিনিয়াছেন, পাঁচশত টাকায় মহলটি আমাকে ছাড়িয়া দিন।” আমি উত্তর করিলাম,- “মহলটির জন্য আমাকে অনেক কষ্ট পাইতে হইয়াছে। আমি উহা ছাড়িব না।” . ত্ৰৈলোক্যনাথ রচনাস। uskla »ižo 33 a www.amarboi.comio وہ