পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৮৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঢাকমহাশয় আমাকে চুপি চুপি বলিলেন,- “আজ একাদশী। বিধবা। সেইজন্য জল দিতে বারণ করিয়াছি। কিন্তু জল দিতে আমার গৃহিণীর ইচ্ছ। এখন করি কি? সেইজন্য তোমাকে ডাকিতে পাঠাইয়াছিলাম।” নীচে গিয়া আমি বলিলাম,- “বাপ রে! জল কি দিতে পারা যায়? ব্ৰাহ্মণের ঘরের বিধবা। একাদশীর দিন জল খাইতে দিলে তাহার ধৰ্ম্মটি একেবারে লোপ হইয়া যাইবে!” ঢাকমহাশয় তাহাই করিলেন। কন্যাকে জল দিলেন না। রাত্ৰিতে কন্যা পাছে নিজে জল চুরি করিয়া খায়, অথবা তাহার কষ্ট দেখিয়া মাতা, ভগিনী কি অপর কেহ পাছে তাহাকে জল প্ৰদান করে, সেজন্য সন্ধ্যার সময় কুন্তলাকে তিনি নীচের তলার এক ঘরে বন্ধ করিয়া চাবি দিয়া দিলেন। সমস্ত রাত্রি পীড়িতা কন্যা একেলা সেই ঘরে রহিল। ধৰ্ম্মরক্ষা সম্বন্ধে ঢাকমহাশয়ের এমনি দৃঢ়পণ। প্ৰাতঃকালে যখন তিনি ঘরের চাবি খুলিলেন, তখন সকলে দেখিল যে, বালিকা পিপাসায় হতজ্ঞান হইয়া ঘরের ভিজা মেঝের একধার হইতে অপর ধারা পৰ্যন্ত সমস্ত রাত্রি বার বার চাটিয়াছে। অবশেষে অজ্ঞান হইয়া ঘরের এক কোণে পড়িয়া আছে। মাতা তাহাকে কোলে তুলিয়া লইলেন। কিন্তু তাহার মাথাটি লুটিয়া পড়িল । সেদিন দ্বাদশী। মাতা তাহার মুখে জল দিলেন, কিন্তু সে গিলিতে পারিল না। দুই কশ দিয়া জল বাহিরে আসিয়া পড়িল। সে আর কথা কহিল না । শেষকালে একবারমাত্র বলিল,— “জাল-জলি ।” এই কথা বলিয়া যে প্ৰাণত্যাগ করিল। এই ঘটনার কথা যখন চারিদিকে প্রচারিত হইল। দেশশুদ্ধ লোক ঢাকমহাশয়কে ধন্য ধন্য করিতে লাগিল। সকলে বলিল,-কি কন্যার মৃত্যুতে ঢাকমহাশয়ের অ যাপন করা অপেক্ষা মরাই ভাল। কিন্তু মৃত কন্যা তাঁহাকে অধিক দিন আনন্দভোগ করিতে দিল না। একদিন রাত্রি দুই প্ৰহরের সময় সহসা “জল, জল! হা জল! হা জল!” এইরূপ ভীষণ চীৎকার করিয়া সে বাড়ীর চারিদিকে ছটুফটু করিয়া বেড়াইল। সকলের নিদ্ৰাভঙ্গ হইল। সকলে ঘোর ভয়ে ভীত হইল। ইহার চারিদিন পরে ঢাকমহাশয়ের পুত্রটি মরিয়া গেল। এইবার ঢাকমহাশয় শোকে অভিভূত হইয়া পড়িলেন। পনের দিন পরে আবার কুন্তলার ভূত সেইরূপ জল জল করিয়া চীৎকার করিল। এবার মাতঙ্গিনী নামক দাসীর মৃত্যু হইল। ফলকথা, যখনই কুন্তলার ভূত চীৎকার করিত, তখনই বাড়ীর একটা-না-একটা লোক মরিতে লাগিল। দাসীর মৃত্যুর পর ঢাকমহাশয় গয়াতে পিণ্ড দিবার জন্য লোক পাঠাইলেন। কিন্তু তাঁহাতে কোন ফল হইল না। কারণ, কিছুদিন পরে পুনরায় যখন চীৎকার হইল, তখন ঢাকমহাশয়ের ছাট্ট নামক চাকর মরিয়া গেল। বিধবা হইয়া একাদশীর দিন ভিজা মেঝে চাটা পাপটি সামান্য নহে। গয়াতে হাজার পিণ্ড দিলেও ইহা ক্ষয় হয় না। yo দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comৰ্ম্মিািক্যনাথ রচনাসংখহ