পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৮৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় পরিচ্ছেদ মোল্লা জামাতা কুন্তলাকে কি উপায়ে উদ্ধার করা যায়, সেই সম্বন্ধে ঢাকমহাশয় আমার সহিত অনেক পরামর্শ করিলেন। কিন্তু আমি তাঁহাকে কিছু বলিতে পারিলাম না। ঢাকমহাশয়ের এক বালক দৌহিত্র আছে। তাহার নাম ভুলু। ভুলু ঢাকমহাশয়ের প্রাণস্বরূপ। এক মুহুৰ্ত্ত তাহাকে চক্ষুর আড় করিয়া ঢাকমহাশয় থাকিতে পারেন না। বিশেষতঃ পুত্ৰহীন হইয়া তাঁহার যত স্নেহ-মমতা ভুলুর উপর পড়িয়াছিল। পাছে কুন্তলার চীৎকারে ভুলুর কোন অনিষ্ট হয়, সেজন্য ঢাকমহাশয় ঘোরতর ভীত হইলেন। বিপদের উপর বিপদ। ঢাকমহাশয়ের জামাতা, ভুলুর পিতা, যাহার নাম কেশর, বোগদাদে গিয়াছিলেন। তাঁর সহিত ঢাকা-মহাশয়ের সদ্ভাব ছিল না। ঢাকমহাশয় আশা করিয়াছিলেন যে, তিনি লড়াইয়ে মারা পড়িবেন। ভুলু ও ভুলুর মাতা চিরকাল তাঁহার নিকট থাকিবে। ভুলুর মাতার নাম কালিকা। বাল্যকাল হইতে তাহাকে আমি কোলে-পিঠে করিয়াছি। কন্যার ন্যায় তাহাকে আমি স্নেহ করি। এত চুল কখন আমি কাহারও দেখি নাই। কিছুদিন পূৰ্ব্বে দোতলার ঘরে জানালার ধারে সে চুল এলো করিয়া বসিয়াছিল। সে যে কি অপূৰ্ব্ব শোভা হইয়াছিল, তাহা তোমাদিগকে আর কি বলিব! ঢাকমহাশয়ের জামাতা, কালিকা দেবীর স্বামী। পিতা কেশব লড়াইয়ে মারা যান নাই । তিনি দেশে ফিরিয়া আসিলেন । দেশে য়া তিনি কালিকা ও ভুলুকে লইতে পাঠাইলেন। ঢাকমহাশয়ের মাথায় ঠিক যেনুৱেঞ্জাঘাত হইল। তিনি বলিলেন,— “কিছুতেই ৰূর্বোিড়ী পাঠাইব না। সে সমুদ্র পার হইয়া বিদেশে গমন করিয়াছে। তাহার জাতি। গিয়াছে কিন্তু ঢাকমহাশয়ের কয়েকজন শিষ্ট যাহারা বি-এ, এম-এ পাশ করিয়ছে, তাহারা বলিল যে,- “মহাশয়! এমন কাজ করিবেন না। আপনার জামাতা রাজকাৰ্য্যে বিদেশে গমন করিয়াছিলেন। মহাসংগ্রামে পৃথিবী টলমল করিতেছে। জৰ্ম্মণদিগকে যদি সম্পূর্ণ পরাজিত করা না যায়, তাহা হইলে ভবিষ্যতে পৃথিবীর ঘোর অনিষ্ট ঘটবে। আমাদেরও সৰ্ব্বনাশ হইবে। ইংরেজের সাহায্য করা উচিত। আপনি যাহা মনস্থ করিয়াছেন, তাহা করিলে রাজার বিরুদ্ধে কাজ করা হইবে। এমন কাজ কখন করিবেন না।” এইরূপ কথা শুনিয়া ঢাকমহাশয় আমাকে ডাকিতে পাঠাইলেন। আমি গিয়া বলিলাম,- “ইংরেজ প্ৰজার ধৰ্ম্মে হস্তক্ষেপ করিবেন না। সাগর অতি ভয়ানক বস্তু। জগন্নাথে গিয়া আমি দেখিয়াছি তিনটা ঢেউ খাইয়া আমার প্রাণওষ্ঠাগত হইয়াছিল। সে সাগর-পারে কেহ যাইলে হিন্দুধৰ্ম্মের গন্ধটি পৰ্যন্ত তাহার গায়ে থাকে না।” আমি পুনরায় বলিলাম,- “আর দেখুন, ঢাকমহাশয়! বিলাতে গেলে বরং নিস্কৃতি আছে। বিলাত গেলে সাহেব হয়, সাহেবি পোষাক পরে, সাহেবি খানা খায়। তা এখন বিলাত না। গিয়াও লোকে এই কাজ করিতেছে। কিন্তু বোগদাদে গমন করিলে লোকে মোল্লা হয়। মোল্লা হইয়া পীরের গান করে। বলে,- “হঁকো বন্দিলাম, কলুকে বন্দিলাম, আর বন্দিলাম টিকে । ডম্বক-চর্কিত দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com ~ ኩr “ስS