পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভূতকে জিজ্ঞাসা করিলেন,— 'মহাশয়ের নিবাস?' আগন্তুকক ভূত উত্তর করিলেন,— 'আমার নিবাস একঠেঙো মুলুকের ও-ধারে, বৌ-ভুলুনি নামক আঁবগাছে।” ঘ্যাঁঘোঁর প্রতিবেশী ভূত পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন,— 'এখানে কি মনে করিয়া আগমন হইয়াছে?’ আগন্তুক ভূত উত্তর করিলেন,— 'আমি ঘ্যাঁঘোঁকে দেখিতে আসিয়াছি।’ প্রতিবেশী ভূতগণ তখন জিজ্ঞাসা করিলেন, — ‘মহাশয়, তবে কি বৈদ্য?' আগন্তুক ভূত বলিলেন,— 'কেন? বৈদ্য কেন হইব? ঘ্যাঁঘ্যোঁর কি কোনও পীড়া-শীড়া আছে না-কি?' প্রতিবেশী ভূতগণ একটু যেন অপ্রতিভ হইয়া উত্তর করিলেন,— 'না না! এমন কিছু নয়! তবে একটু একটু খুক-খুক করিয়া কাসি আছে, তাহার সহিত অল্প-অল্প আলকাতরার ছিট থাকে, আর বৈকালবেলা যৎসামান্য ঘুষ ঘুষে জ্বর হয়। তা সে কিছু নয়, গরমে হইয়াছে, নাইতে-খাইতে ভাল হইয়া যাইবে।' এই কথা শুনিয়া আগন্তুক ভূতের তো চক্ষুস্থির! আর তিনি ঘ্যাঁঘ্যোঁর কাছে ফিরিয়া যাইলেন না! সেই বিল হইতে একবারে একঠোঙো মুলুকের ও-ধারে গিয়া উপস্থিত হইলেন। নাকেশ্বরীর মাসীকে সকল কথা বলিলেন। সম্বন্ধ ভাঙ্গিয়া গেল। নাকেশ্বরী একটি সুন্দরী ভূতিনী। তাহার রূপে ঘ্যাঁঘ্যো একেবারে মুগ্ধ হইয়াছিল! কতদিন ধরিয়া পাগলের মত সে গাছে গাছে কাঁদিয়া বেড়াইয়াছিল! তারপর মৌনব্রত অবলম্বন করিয়া অন্ধকূপের ভিতর বসিয়াছিল। যাহা হউক, অবশেষে বিবাহ যে হইয়া গিয়াছে, তাহাই সুখের কথা।”

 আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,— “শ্লেষ্মার সহিত আলকাতরা কি?”

 স্কল বলিলেন,— “তোমাদের যেরূপ রক্ত, আমাদের সেইরূপ আলকাতরা। কাসরোগে আমাদের বক্ষঃস্থল হইতে আলকাতরা বাহির হয়।”

 আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,— “যদি আমাদের মত ভূতদিগের রোগ হয়, তাহা হইলে ভূতেরাও তো মরিয়া যায়? আচ্ছা! মানুষ মরিয়া তো ভূত হয়, ভূত মরিয়া কি হয়?”

 স্কল উত্তর করিলেন,— “কেন? ভূত মরিয়া মারবেল হয়? সেই যে ছোট ছোট গোল গোল ভাঁটার মত মারবেল, যাহা লইয়া ছেলেরা সব খেলা করে!"

 আমি বলিলাম,— “মারবেল হয়। পৃথিবীতে এত বস্তু থাকিতে মারবেল হয় কেন?”

 স্কল আমার এই কথায় কিছু রাগতঃ হইয়া বলিলেন— “ভুল হইয়াছে! তোমার সহিত পরামর্শ করিয়া তারপর আমাদের মরা উচিত! এখন হইতে না হয় তাই করা যাইবে।”

 আমি বলিলাম,— “মহাশয়! আমার অপরাধ ক্ষমা করুন। আমি জানি না, তাই জিজ্ঞাসা করিতেছি! যদি অনুমতি করেন তো আর একটি কথা জিজ্ঞাসা করি,—ভূত মরিয়া যদি মারবেল হয়, তাহা হইলে মারবেল লইয়া খেলা করা তো বড় বিপদের কথা?”

 স্কল উত্তর করিলেন,— “মরা ভূত লইয়া খেলা করিতে আবার দোষ কি? হাঁ! জীয়ন্ত ভূত হইত! তাহা হইলে তাহার সহিত খেলা করা বিপদের কথা বটে!”

 স্কল পুনরায় বলিলেন— “তোমার সহিত আর আমাদের মিছামিছি বকিবার সময় নাই। আমরা কোম্পানী খুলিয়াছি, এখন গিয়া কোম্পানীর কাজ করি। আমরা 'স্কল স্কেলিটন এবং কোম্পানী’। আমরা কম ভূত নই। যেসব কথা বলিয়া দিয়াছি, সাবধানে মনে করিয়া রাখিবে। তা না হইলে বিপদে পড়িবে। এখন আমরা চলিলাম। আর তোমার সহিত আমাদের, সাক্ষাৎ হইবে না।”

 এই বলিয়া স্কল ও স্কেলিটন সেখান হইতে প্রস্থান করিলেন। অট্টালিকার ভিতর আমি একেলা বসিয়া রহিলাম। তাহার পর কি করিলাম, তাহা তুমি জান, বলিবার আর আবশ্যক নাই। কঙ্কাবতী! কথা এই! এখন সকল কথা তোমাকে বলিলাম।

৮৪
ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ