পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “ওগো! তুমি আমার স্বামীকে মারিও না। আমি বড় দুঃখিনী, আমি কাঙ্গালিনী কঙ্কাবতী। কত দুঃখ পাইয়া আমি এই প্রাণসম পতিকে পাইয়াছি। পৃথিবীতে এই পতি ভিন্ন আর আমার কেহ নাই। ওগো! আমার স্বামীকে না মারিয়া তুমি আমার প্রাণবধ কর। তোমার পায়ে পড়ি, তুমি আমার স্বামীকে মারিও না। আমরা তোমার এ ধন চাহি না, কিছু চাহি না। আমার পতিকে তুমি দাও, আমার পতিকে লইয়া আমি ঘরে যাই। তোমার যাহা কিছু টাকা লইয়াছি, সব ফিরিয়া দিব। মানুষ খাইতে যদি তোমার সাধ হইয়া থাকে, তুমি আমাকে খাও, তুমি আমার রক্তপান কর। আমার স্বামীকে তুমি কিছু বলিও না, স্বামীকে আমার ফিরিয়া যাইতে দাও।”

 নাকেশ্বরীর পা ধরিয়া কঙ্কাবতী এইরূপে কঁদিতে লাগিলেন, নানামতে কাকুতি-মিনতি করিতে লাগিলেন। সে খেদের কথা শুনিলে পাষাণও দ্রব হইয়া যায়! নাকেশ্বরীর মনে কিন্তু কিছুমাত্র দয়া হইল না, নাকেশ্বরী সে কথায় কর্ণপাতও করিল না। কঙ্কাবতী যত কাঁদেন, আর নাকেশ্বরী বামহস্ত উত্তোলন করিয়া কেবল বলে,— “দূর! দূর!”

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “ও গো! আমার স্বামীকে ছাড়িয়া আমি এখান হইতে দূর হইব না। আমার স্বামীকে দাও, আমি এখান হইতে এখুনি দূর হইতেছি। স্বামী স্বামী! উঠ। চল আমরা এখোন হইতে যাই; স্বামী উঠ!”

 কঙ্কাবতী যত কাঁদেন, যত বলেন, হাত উত্তোলন করিয়া নাকেশ্বরী তত বলে,— “দূর, দূর!”

 কঙ্কাবতী উঠিয়া দাঁড়াইলেন। চক্ষু মুছিলেন। তাহার পর আরক্তনয়নে দৰ্পের সহিত নাকেশ্বরীকে বলিলেন,— “আমার স্বামীকে দিবে না? আমাকেও খাইবে না? কেবল— 'দূর দূর’! মুখে অন্য কথা নাই? বটে! তা নাকেশ্বরী হও, আর যাই হও, আজ তোমার একদিন, কি আমার একদিন!”

 এই কথা বলিয়া পাগলিনী উন্মাদিনীর ন্যায়, কঙ্কাবতী নাকেশ্বরীকে ধরিতে যাইলেন। কোনও উত্তর না করিয়া নাকেশ্বরী কেবলমাত্র একটি নিশ্বাস পরিত্যাগ করিল। সেই নিশ্বাসের