পাতা:দত্তা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ ধরিয়া বারান্দায় পায়চারি করিয়াও যখন সময় কাটিতে চাহিল না, তখন অকস্মাৎ তাহার বাল্যবন্ধুদের কথা মনে পড়িল । বহুকাল কাঙ্কারও সহিত দেখা-সাক্ষাৎ নাই, চিঠি-পত্ৰও বন্ধ ছিল, আজ তাহাদিগকেই স্মরণ করিয়া সে কয়েকখানা পত্র লিখিবর জন্য তাহার পড়িবার ঘরে আসিয়া প্ৰবেশ করিল । মনের মধ্যে, তাহার কত না বেদনা সঞ্চিত হইয়াছিল। চিঠির মধ্যে দিয়া তাহাদিগকেই যুক্তি দিতে গিয়া সে দেখিতে দেখিতে একেবারে মগ্ন হইয়া গেল। কেমন করিয়া যে সময় কাটিল, কত যে অশ্রু ঝরিয়া পড়িল, তাহার কিছুই খেয়াল ছিল না। এমনি সময়ে পরেশের মা দ্বারের কাছে আসিয়া কহিল, বেলা যে একটা বেজে গেল দিদিমণি, খাবে না ? ঘড়ির প্রতি চাহিয়া পুনশ্চ লেখায় মনঃসংযোগ করিতে যাইতেছিল, পরেশের মা সলজ্জ মুম্বুকণ্ঠে কহিল, ও মা, ডাক্তারবাবু আসচেন যে ! বলিয়াই তাড়াতাড়ি সরিয়া গেল। বিজয়া চমকিয়া মুখ ফিরাইয়া দেখিল, ঠিক সোজা বারান্দার অপর প্রান্তে পরেশের পিছনে নরেন্দ্র আসিতেছে । ইতিপূৰ্বে আরও কয়েকবার সে উপরে আসিলেও নিজের ইচ্ছায় এমন বিনা সংবাদে উঠিয়া আসিতে পারে, ইহা বিজয়া ভাবিতেও পারিত না। তাহার মুখ শুষ্ক, বড় বড় রুক্ষ চুল এলো-মেলো ; কিন্তু দৈ ঘরে পা দিয়াই যখন বলিয় উঠিল, সেদিন আমাকে চিনতে চানুনি কেন, বলুন তৃ ? বলিয়া একটা চৌকি অধিকার করিয়া বসিল, তখন তাহার মুখে, তাহার কণ্ঠস্বরে, তাহার সর্বদেহে হৃদয়-ভারাক্রান্ত, ক্লাস্তি এমন করিয়াই আত্মপ্ৰকাশ করিল যে, বিজয় জবাব দিবে কি, দুৰ্বিসহ ” ቅ 8ጝ