বৌ তা হলে রাগ করে গেছে, বল ? না, রাগ নয়, দুঃখ-কষ্ট-কত অভাব জানিস ত ? ওদের এ-সব সহ্য করা অভ্যাস নেই, দেহটাও তার বড় খারাপ হয়েছে, নইলে অসুখ দেখলে কি তোরা রাগ করে থাকতে পারিস ? বিমলা অশ্রু চাপিয়া কঠিন-স্বরে বলিল, পারি বই কি দাদা, আমাদের অসাধ্য কাজ কিছুই নেই। না হলে, তোমরা বিছানায় না শোয়া পৰ্য্যন্ত আর আমাদের চোখে পড়ে না ! ভোলা, পালকি এলো রে ? আনতে পাঠিয়েচি মা । এর মধ্যেই যাবি দিদি ? এখনো ত সন্ধ্যে হয়নি, আর একটু বোস না ? না দাদা, সন্ধ্যে হলে হিম লাগবে ! ভোলা, পালকি একেবারে ভেতরে আনিস । ভেতরে কেন বিমল ? ভেতরেই ভাল দাদা । এই ব্যথা নিয়ে তোমার বাইরে গিয়ে উঠতে কষ্ট হবে। আমাকে নিয়ে যাবি ? এই পাগল দেখি ! কি হয়েছে যে এত কাণ্ড করতে হবে ? এত আমার প্রায়ই হয়। প্রায়ই সেরে যায়। তাই যাক দাদা । কিন্তু ‘ভাই’ ত আমার আর নেই যে, তোমাকে হারালে আর একটি পাব । ঐ যে পালকি-এই র্যাপারখানা বেশ করে গায়ে জড়িয়ে নিয়ো । ভোলা, আর একটু এগিয়ে আনতে বলনা দাদা, এ-সময় তোমাকে চোখে-চোখে না রাখতে পারলে আমার তিলাৰ্দ্ধ স্বস্তি থাকবে না । কিন্তু, নিয়ে যেতে চাইবি বুঝলে যে তোকে আমি খবরই দিতুম না। বিমলা মুখপানে চাহিয়া থাকিয়া বলিল, তোমাদের বোঝা তোমাদেরই থাক দাদা, আমাকে আর শুনিয়ে না। আচ্ছা, কি করে মুখে আনলে বল ত ? এই অবস্থায় তোমাকে একলা ফেলে বেখে যেতে পারি ? সত্যি কথা বল । Σ 8
পাতা:দর্পচূর্ণ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৪
অবয়ব