আছে বই কি ! এখনি নিয়ে আসচি, দাসী চলিয়া গেল। ইন্দুর মুখের উপর হইতে বিরক্তির মেঘখানা সম্পূর্ণ উড়িয়া গেল। বর” অনতিপূর্বে স্বামীর মলিন মুখখানা বুকের কোথায় যেন একটু খচখচ করিতেও লাগিল । বিশ্রাম করিয়া ঘণ্টা-দুই পরে সে প্ৰসন্নমুখে বসিবার ঘরে ঢুকিয়, দেখিল, নরেন্দ্র চশমা খুলিয়া কুকিয়া বসিয়া কি লিখিতেছে ; কহিল, অতি মন দিয়ে কি লেখা হচ্ছে, কবিতা ? নরেন্দ্ৰ মুখ তুলিয়া বলিল, না । কি তবে ? ও কিছু না, বলিয়া সে লেখাগুলো চাপা দিয়া রাখিল । ইন্দুর প্রসন্ন মুখ মেঘাবুত হইয়া উঠিল! কহিল, তা হলে ‘কিছু না’র উপর অত ঝুকে না পড়ে বরং যাতে দুঃখ-কষ্ট ঘোচে এমন কিছুতেই মন দাও। শুনলুম, দাদার হাতে নাকি গোটাকতক চাকরী খালি আছে। বলিয়া ভাল করিয়া স্বামীর মুখের পানে চাহিয়া রহিল। সে নিশ্চয় জানিত, এই চাকুরী কথাটা তাহাকে চিৰদিন আঘাত করে। আজ আশ্চৰ্য্য হইয়া দেখিল, আঘাতের কোন বেদনাই তাহার মুখে প্ৰকাশ পাইল না । নরেন্দ্ৰ শান্তভাবে বলিল, চাকরি করবার লোকও সেখানে আছে { এই সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত উত্তরে ইন্দু ক্ৰোধে জ্বলিয়া উঠিল । ক্ষণকাল অবাক হইয়া থাকিয়া বলিল, তা জানি। কিন্তু সেখানে আছে, এখানে নেই নাকি ? আজকাল ভাল কথা বললে যে তোমার মন্দ হয় দেখচি ! ঘরের কোণে ঘাড় গুজে বসে কবিতা লিখতে তোমার লজ্জা করে না ? বলিয়া সে চোখ-মূখ। রাঙা করিয়া ঘর ছাড়িয়া গেল। এই দ্বিতীয় সাক্ষাৎ । আঁ্য-এ যে বৌ! কখন এলে! পরশু দুপুরবেলা ।
পাতা:দর্পচূর্ণ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২০
অবয়ব