বিমলা জিজ্ঞাসা করিল কেন ? কারণ, প্ৰতিপালন করবার ক্ষমতা না থাকলে এটা মহাপাপ ! উত্তর শুনিয়া বিমলা মর্মাহত হইল। ইন্দুকে সে ভালবাসিত। খানিকক্ষণ পরে কহিল, অম্বিকাবাবুর অন্যায় থাকতে পারে, কিন্তু তাই বলে তার স্ত্রী নিজের কৰ্ত্তব্য করবে না ? তাকে তা মরণ পৰ্য্যন্ত স্বামীসেবা করতে হবে ? কেন হবে ? তিনি অন্যায় করবেন, যাতে অধিকার নেই। তাই করবেন।--তার ফলভোগ করবো। আমরা ? তুমি ইংরিজি পড়নি, আর পাঁচটা সভ্য-সমাজের খবর রাখ না ; নইলে বুঝিয়ে দিতে পারতুম, কৰ্ত্তব্য শুধু একদিকে থাকে না । হয় দু’দিকে থাকবে, না হয় থাকবে না । পুরুষেরা একথা আমাদের বুঝতে দেয় না ; দেয় না বলেই আমরা অম্বিকাবাবুর স্ত্রীর মত মৃত্যুপণ করে সেবা করি। বিমলা মুহুর্তকাল চাহিয়া থাকিয়া কহিল, না হলে করতাম না। বৌ, সেবা করাটা কি স্ত্রীর বড় দুঃখের কাজ বলে মনে করা ? অম্বিকাবাবু স্ত্রীর বাইরের ক্লেশটাই দেখতে পাও, আর ভেতরের আনন্দটা জানতে পাও কি ? আমি জানতেও চাই নে । স্বামীর ভালবাসাটাও বোধ করি জানতে চাও না ? না ঠাকুরবি, অরুচি হয়ে গেছে । বরং ওটা কম করে নিজের কৰ্ত্তব্যটা করলেই হাফ ছেড়ে বাচি । বিমলা দাড়াইয়াছিল, নিশ্বাস ফেলিয়া ধীরে ধীরে বসিয়া পড়িয়া বলিল, ঠিক এই কথাটা আগেও একবার বলেচ। কিন্তু তখনও বুঝতে পারিনি, এখনও বুঝতে পারলুম না ; আমার দাদা তার কৰ্ত্তব্য করেন। না ! কি সে, তা তুমিইই জানো । অনেক বই পড়েচ, অনেক দেশের খবর জানো -তোমার সঙ্গে তর্ক করা সাজে না ; কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস স্বামী ন্যায়-অন্যায় যাই করুন, তার ভালবাসা অগ্ৰাহ্যু করবার স্পৰ্দ্ধা কোন দেশের স্ত্রীর নেই। আমার ত মনে হয়, ও জিনিস S8
পাতা:দর্পচূর্ণ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৪
অবয়ব