না। ধরে নিয়ে যাবার পরে দাদা ভোলাকে আমার কাছে কাশীতে পাঠিয়ে দেন, কিন্তু আমরা তখন এলাহাবাদে চলে যাই ; সে ফিরে আসে আবার যায় ; ঐ-রকম করে দশ দিন দেরি হয়ে যায়। তার পরে আমি এসে পড়ি। আমার কাছেও নগদ টাকা ছিল না, আমার গয়নাগুলো বাধা দিয়ে, এগার দিনের দিন দাদাকে বার করে নিয়ে আসি। তোমারও তা চার-পাঁচ হাজার টাকার গয়না আছে বেী, মেদিনীপুরও দূর নয়। তোমাকে খবর দিতে পারলে, এসব কিছুই হতে পারত না । দাদা বরং দশ দিন জেল ভোগ করলেন, কিন্তু তোমার কাছে হাত পাতালেন না । আর তোমার তার কাছে গিয়ে কি হবে ? অনেক সুখই ত তেঁাকে দিলে তুমি, এবার মুক্তি দাও-তিনিও বঁাচুন, তুমিও বঁাচে । ইন্দু এক মুহুৰ্ত্ত মাথা হেঁট করিয়া বসিয়া রহিল। তাহার পর একে একে গায়ের সমস্ত অলংকার খুলিয়া ফেলিয়া, বিমলার পায়ের কাছে ধরিয়া দিয়া বলিল, এই নিয়ে তোমার নিজের জিনিস উদ্ধার করে এনে ঠাকুরঝি --আমি তার কাছেই চললাম। তুমি বলচ স্থান হবে না,-কিন্তু আমি বলচি, এইবারেই আমার তার পাশে যথার্থ স্থান হবে । যা এতদিন আমাকে আলাদা করে রেখেছিল, এখন, তাই তোমার কাছে ফেলে দিয়ে, আমি নিজের স্থান নিতে চললুম। কাল একবার যেয়ো ভাই, — গিয়ে তোমার দাদা আর বৌদিকে দেখে এসো, —চললুম। বলিয়া ইন্দু গাড়ির জন্য অপেক্ষা না করিয়াই বাহির হইয়৷ গেল। ওরে ভোলা, সঙ্গে যা, বলিয়া বিমলা চোখ মুছিয়া, পিছনে পিছনে দরজায় আসিয়া দাড়াইল । 8
পাতা:দর্পচূর্ণ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪২
অবয়ব