হাতে তুলিয়া লইল। শুধু উপরে যায় না-স্বামীর সহিত দেখা করে না। ক্রমে সুরমাণ্ড উপর ছাড়িয়া দিল। বৌ প্ৰফুল্প গম্ভীরমুখে কাজ করিত, সুরমা পাশে বসিয়া থাকিত । একজন দেখাইত কর্ম করিয়া কত সুখ, অপর বুঝিত কর্মস্রোতে অনেক দুঃখ ভাসাইয়া দিতে পারা যায়। দু'জনের কেহই বেশী কথা কহে না, তাহদের সহানুভূতি ক্ৰমে গাঢ়তর হইয়া আসিতে লাগিল । মাঝে মাঝে নূতন বন্ধুর প্রায় জর হয়, দুই-চারিদিন উপবাস থাকিয়া আপনি সারিয়া ওঠে । ঔষধে প্ৰবৃত্তি নাই, ঔষধ খায় না। সে-সময়ের কাজকর্মগুলা দাসদাসীতেই করে ; সুরমা পারিয়া উঠে না, ইচ্ছা থাকিলেও সামর্থ্যে কুলায় না। সোনার প্রতিমা সুরমা দেবীর এখন সে রং নাই, সে কান্তি নাই, অত লাবণ্য দুই মাসের মধ্যে কোথায় উড়িয়া গিয়াছে। বৌ মাঝে মাঝে বলে, ঠাকুরবি, তুমি দিন দিন এমন হয়ে যাচ্ছে কেন ? আমি ? আচ্ছা বো, শরীরটা ভাল করবার জন্যে আমি যদি বিদেশে যাই, তোমার কষ্ট হবে না ত ? श्हरु छैद कि । তবে যাব না ? না ঠাকুরবি, যেয়ে না, তুমি ঔষধ খেয়ে এখানেই ভাল হও । সুরমা স্নেহভরে তাহার ললাট চুম্বন করিল। একদিন সুরমা যজ্ঞদত্তের খাবার সাজাইতেছিল। যজ্ঞদত্ত তাহার মলিন কুশ মুখখানি সতৃষ্ণ চক্ষে দেখিতেছিল। সুরমা মুখ তুলিলে, সে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া কহিল, মনে হয় মলেই বঁচি ! কেন ? বলিতেই সুরমার চক্ষে জল আসিল । ভয় হয়। আর কতদিন এ প্ৰাণটাকে বয়ে বেড়াতে হবে। বন্দুকের গুলি খাইয়া বনের পশু যেমন মাটি ছাড়িয়া আকাশে পলাইবার জন্য প্ৰাণপণে - লাফাইয়া উঠে, কিন্তু আকাশ তাহার কেহ নয়, তাই সেই আশ্রয়শূন্য মরণাহত জীব শেষে চিরদিনের আশ্রয় পৃথিবীকেই জড়াইয়া ধরিয়া @>
পাতা:দর্পচূর্ণ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৯
অবয়ব