চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া সে সুরমার মুখপানে চাহিয়া রহিল । সুরমা বার বার শিহরিয়া উঠিল-মিছে কথা বো, ভয়ানক মিছে কথা। আমার বিশ্বাস হয় না, উনি মিছে কথা বলবেন ? সুরমা আর সহিতে পারিল না-দুই বাহুর মধ্যে দৃঢ় করিয়া আলিঙ্গন করিয়া ফুকারিয়া কঁাদিয়া উঠিল, বৌ, আমি মহাপাতকী । বধূ আপনাকে ছাড়াইয়া লইয়া ধীরে ধীরে কহিল, কেন ঠাকুর ঝি ? উঃ, তা আর শুনতে চেয়ে না । আমি বলতে পারব না । ঝড়ের মত সুরমা যজ্ঞদত্তের সন্মুখে আসিয়া পড়িল,-বেীকে এমন করে ঠকিয়ে রেখেচ, উঃ, কি ভয়ানক মিথ্যাবাদী তুমি! যজ্ঞদত্ত অবাক হইয়া গেল। ও কি সুরো ? কৃতবিদ্য তুমি, ছিছি, তোমার লজ্জা হওয়া উচিত । যজ্ঞদত্ত অর্থ বুঝিল না, শুধু কটুকথা শুনিতে লাগিল । কি ভেবে বিয়ে করেছিল ? কি ভেবে ত্যাগ করে আছ ? আমার জন্য ? আমার মুখ চেয়ে এই প্ৰতারণা করে আসচ ? সুরমা, পাগল হয়ে গেলে ? পাগল আমি ? তোমার চেয়ে আমার জ্ঞান আছে, দাও আমাকে কোথাও পাঠিয়ে। সুরমার চক্ষু রক্তবর্ণ, হাঁপাইতে হাঁপাইতে কহিল, এক দণ্ডও আমি থাকতে চাই না, ছিঃ ছিঃ ! যজ্ঞদত্ত চীৎকার করিয়া কহিল, কি বলচ ? বলচি তুমি মিথ্যাবাদী-প্ৰতারক। নিমেষে যজ্ঞদত্তের মাথার ভিতর আগুন জ্বলিয়া উঠিল । অকারণে মনে হইল, তাহার ভিতরের অন্তরটা বাহির হইয় তাহার সহিত যুদ্ধ করিতে ডাকিতেছে। জ্ঞানশূন্য হইয়া সে টেবিলের উপরিস্থিত ভারী রুলার তুলিয়া লইয়া চীৎকার করিয়া কহিল, আমি অধম, আমি প্ৰতারক, আমি মিথ্যাবাদী, এই তার প্রায়শ্চিত্ত করাচি । বিপুল বলের সহিত যজ্ঞদত্ত স্ব-মস্তকে ভীষণ আঘাত করিল। মাথা ফাটিয়া ঝরঝর করিয়া রক্তস্রোত বহিল। সুরমা অক্ষুটে ডাকিল, V
পাতা:দর্পচূর্ণ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬১
অবয়ব