পাতা:দর্পণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাইরে যে চেয়ারটি নিয়ে গিয়েছিল, ওসমান সেটিও নিয়ে আসে। । ব্যস্তভাবে সে ঘরে বাইরে আনাগোনা করে, সমাদর জানানোর চেষ্টায় অর্থহীন কথা বলে। ছেলেমানুষের মত সে উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। তার এই উত্তেজনার আসল কারণটি তখনো কৃষ্ণেন্দু অনুমান করতে পারেনি, একসময় সে হাসিমুখে অনুযোগ দিয়ে বলে, “অত খাতির করবেন না, আলি সা’ব। মুস্কিলে ফেলে দিচ্ছেন যে আমাদের ” বলতে বলতে সবিস্ময়ে তাকিয়ে দেখল, বাইশ তেইশ বছরের একটি মেয়ে অত্যন্ত সঙ্কোচের সঙ্গে ঘরে ঢুকছে। পাতলা ছিপছিপে গড়ন, মুখখান সুশ্ৰী ও কোমল, গায়ে কজি-হাতা জামা, পরণে ফিকে সবুজ শাড়ী, পায়ে জরি বসানো চটি। ঘরে ঢুকেই দ্বিধাভরে সে দাড়িয়ে পড়ল, তারপর আরও দু’পা এগিয়ে এল। মেঝের দিকেই সে তাকিয়ে রইল, একবার শুধু চকিতের জন্য তার গভীর কালো চোখের দৃষ্টি তাদের দিকে বিলিক দেওয়ার মত খেলে গেল । ওসমান পরিচয় করিয়ে দিল, “ইনি আমার স্ত্রী। ইনি কৃষ্ণেন্দু বাবু, ইনি হীরেন। বাবু।” ব্যস্ত সমস্ত ভাব কেটে গিয়ে ওসমান এখন শান্ত ও গম্ভীর হয়ে উঠেছে। উৎকণ্ঠার সঙ্গে সে আমিনার ভাব-ভঙ্গি লক্ষ্য করে। আমিনার অবস্থা সে ভাল করেই বুঝতে পারছিল। ব্যাপারটা শেষ পৰ্য্যন্ত হাস্যকর হয়ে না যায়, এখন ওসমানের এই আশঙ্কা । বেশী কিছু আশা করে না সে আমিনার কাছে। পাচ ছ’মাস আগে কৃষ্ণেন্দুর বাড়ীতে তার বৌদিদি কেমন সহজভাবে তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল, তার সঙ্গে আলাপ করেছিল, ওসমানের মনে পড়তে থাকে । ওদের অভ্যাস আছে, ওদের কথা আলাদা । জীবনে আজ এই প্ৰথমবারের চেষ্টায় আমিনা কেন ওদের মত হতে পারবে। সে যেন শুধু ভেঙে না পড়ে, হঠাৎ যেন পালিয়ে না। যাস । Sobፖቲን”