পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘিয়ে বেশি ভেজাল-এই যা তফাত। আর এ হল আমার কারখানায় সদ্য তৈরী খাঁটি Gooss. (FQ8 °IGKS SISICS P মোহান্তজীও আমার সঙ্গে ভোজনে বসেছিলেন। দেখলাম। যদিও তাঁর বয়স হয়েচে-কিন্তু আমার মতো তিনটি লোকের উপযক্ত পরী, তরকারি ও হালয়া অবাধে উদরাসাৎ করলেন। মোহান্তজীকে আমার বড় ভালো লাগলো, এমন নিরীহ সজন মানষি খািব কম দেখা যায়। এক এক জায়গায় এক এক ধরনের মানষের ছাঁচ থাকে-অন্যত্র তা পাওয়া যায় না। আমার মনে হয়, বাংলার বাইরে আমি নিছক নিরীহ, সরল ও ভালেমানষে লোকের যে ছাঁচ দেখোঁচি, বাংলাদেশে তা দেখি নি। হয়তো ঠিক ব্যাপারটা বোঝাতে পারাচিনে-কিন্তু একথা খাব সত্যি, বাংলার অতি অজ পাড়াগাঁয়েও লোকের খানিকটা কুটিল বন্ধি, খানিকটা আত্মসম্পমান-জ্ঞান, খানিক চালাক-চতুরতা আছে। এসব থাকলেই আর লোক নিছক সরল টাইপের হল না। তা মেয়েদের কথাই বা কি, আর পরিষদের কথাই বা কি। এর কারণ বাঙালীর মধ্যে অতি নিবোধ লোক নেই বললেই হয়-ওদের অনেকখানি জন্মগত শিক্ষা-দীক্ষা আছে—তাতে সংসারে অনেক ব্যাপারে। ওদের অভিজ্ঞতা আপনা-আপনি হয়-রেলে বা সন্টীমারে এক স্থান থেকে আর এক স্থানে যাতায়াতের বেশি সবিধে বাংলাদেশে। তা থেকেও লোকে অনেক বাইরের জ্ঞান সঞ্চয় করতে পারে। বাংলাদেশে আমি খােব নিরীহ লোক ভেবে যার কাছে হয়তো গিয়েচি, দেখোঁচ সে আসলে অনেক কিছ জানে বা বোঝে—ফলে তার মনের নিছক সারল্য নষ্ট হয়ে গিয়েচে । কিন্তু বাংলার বাইরে আমি আশচয্য ধরনের সরল ও নিরীহ লোক দেখোঁচ —তাদের শিশসলভ। সারল্য। কতবার আমাকে মগধ করেচে। আমি আমার জীবনে এ-ধরনের সরল লোক খাজে বেড়িয়েচি-আমার আবাল্য ঝোঁক ছিল। এদিকে, মানষের টাইপ খাজে বার করবো। আমার অভিজ্ঞতা দিবারা দেখোঁচি বিহার ও সি-পিতে, ছোটনাগপরে এই সরল টাইপটা বেশ পাওয়া যায়। এখনও পাওয়া যায়। তবে আজকাল নম্ৰাট হয়ে যেতে বসেচে। মানষের মনকে বিত্তমান সভ্যতা ও শিক্ষা একটি কলের ছাঁচে গড়চে। সব এক ছাঁচ, রামও যা ভাবে শ্যামও তাই ভাবে, যদ-মধ্যও তাই ভাবে। যে আর একজনের মতো না ভাবে-তাকে লোকে মািখ বলে, অশিক্ষিতও বলে—সতরাং সমাজের ভয়ে, লোকনিন্দার ভয়ে, শবশরিবাড়িতে শালীশালদের শ্রদ্ধা হারাবার ভয়ে—লোকে অন্য রকম ভাবতে ভয় পায়। ফলে শিলেপ, সাহিতো, সামাজিক রীতিনীতিতে একই ছাঁচের মনের পরিচয় পাওয়া যায়। সব্বত্র, অনেক খাজেও খাঁটি অরিজিনাল টাইপ বার করা যায় না। শহরে তো যায়ই না, শহর থেকে সদরে, নিভৃত পল্লী অঞ্চলেও বড় একটা দেখা যায় না। তবে বাংলার বাইরে, যেখানে ইউনিভারসিটি, খবরের কাগজ, রেডিও প্রভৃতির উৎপাত নেই, কিংবা শিক্ষিত লোকের যাতায়াত কম, এমন অরণ্য অণগুলে—নিকটে যেখানে রেলসেন্টশন বা মোটর বাসের চলাচলের পথ নেই-সেখানে দ-একটা অতি চমৎকার ছাঁচের মানষ দেখোঁচ। এদের আবিস্কারের আনন্দ আমার কাছে এবটা নতুন দেশ আবিস্কারের সঙ্গে সমান। মোহাতজনী অনেকটা সেই ধরনের মানষ। তিনি রাত্রে মন্দিরে ফিরে যাবার আগে আমায় বিশেষ অননুরোধ করলেন আমি যেন আমার ভাগলপারস্থ বন্ধ বান্ধবকে বলে তাঁর মন্দির মেরামতের ও মন্দিরের আয় বাড়াবার একটা ব্যবস্থা করে দিই। অনেকখানি সরল আশা-ভরসা তাঁর চোখোমখে SO