পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ চোন্দ-পনেরো বছর আগের কথা। কি তারও বেশী হবে হয়তো। আমার বন্ধ রমেশবাব, আর আমি দজনে কলকাতার মেসে একঘরে আছি বহদিন। ভালো লাগে। না, এ রকম কলকাতায় পড়ে থাকা । দেশেও তখন যাওয়ার নানারকম অসবিধা ছিল। কিন্তু একটা বাইরে মা বেরলে ধলো আর ধোঁয়ায় প্রাণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো। ” রমেশবাবকে বললাম--চলন কোথাও বেড়িয়ে আসি। রমেশবাবার ট্যাকের অবস্থাও খাব ভাল নয়। আমার চেয়ে। তিনি অবাক হয়ে চেয়ে বললেন।--বেড়াতে যাবো। কিন্তু হাতে টাকাকড়ি কই-- --বিনা টিকিটে গিয়ে জেল খাটবো নাকি ? — রেলে চড়ে নয়, পায়ে হেটে । -কতদার যাবেন পায়ে হেটো? তাঁকে বঝিয়ে বললাম-বেশীদার মোটেই নয়। ব্যারাকপার ট্রাঙ্ক রোড দিয়ে বার হয়ে পায়ে হেটে যতদর যাওয়া যায়। কি করবো যখন হাতে পয়সা নেই, এ ছাড়া তখন উপায় কি ? তিনি কি মনে করে রাজি হয়ে গেলেন। হাঁটতে হাঁটতে বারাকপার ট্রাঙ্ক রোডের ধারে একটা বাগানবাড়িতে আমরা কছাক্ষণ বসি। বাগানের উড়ে মালী এসে আমাদের সঙ্গে খানিকটা গল্প করে গেল। তাকে দিয়ে আমরা বাগানের গাছ থেকে ভালো কাশীর পেয়ারা পাড়িয়ে আনলাম। সে ভুগড়ে দেওয়ারও প্রস্তাব করেছিল, কিন্তু তাতে দেরি হবে বলে আমরা রাজি ডানদিকের একটা পথ ধরে আমরা বড় রাস্তা ছেড়ে দিলাম। অনেকদিন পরে কলকাতা থেকে বার হয়েচি-কতদর আর এসেচি, না হয়। মাইল পাঁচ-ছয় হবে- কিন্তু যেন মনে হচ্ছে কতদাের এসে গিয়েছি। কলকাতা থেকে-স্বপন্নপরীর চক্রবারে এসে পৌছে গিয়েছি যেন। প্রত্যেক বন ঝোপ যেন অপব্ব, প্রতিটি পাখীর ডাক অপৰিব, ডোবার জলে এক-আধটা লালফােল তাও অপব্ব । জীবনে একটা সত্য আবিস্কার করেচি অভিজ্ঞতার ফলে । যে কখনো কোথাও বার হবার সহযোগ পায়নি, সে যদি কালেভদ্রে একট-আধটা বাইরে বেরবার সহযোগ পায়- যতটােকই সে যাক না কেন, ততটকুই গিয়েই সে যা আনন্দ পাবে- একজন অর্থ ও বিত্তশালী Blase) ভ্ৰমণকারী হাজার মাইল ঘরে তার চেয়ে বেশি কিছ আনন্দ পাবে না। কাজেই আমার সেদিনকার ভ্ৰমণটা এদিক থেকে দেখতে গেলে তুচ্ছ তো নিয়ই—বরং আমার জীবনের মধ্যে অত্যন্ত মাল্যবান সেদিনটির আনন্দ। কারণ, আসলে দেখে চোখ আর মন । যখন ওই দটি ইন্দ্ৰিয় বহদিন বক্তৃক্ষ, তখন যে কোন মন্ত স্থান, সামান্য একটা বশিঝাড়, একটি হয়তো ধানের মর্যাইওয়ালা গহস্থবাড়ি, আকা-বাঁকা গ্ৰাম্য নদী, কোথাও একটা বনের পাখীর ডাক-মধরে, স্বপনময় হয়ে ওঠে। পয়সা যাদের আছে, খাব ঘরে বেড়াতে পারে তারা- ভালো কথাই, কিন্তু Blaise” হবার ভয়ও যথেষ্ট। তখন ভীম নাগের সন্দেশও মাথে রোচে না। পরবত্তীকালে জীবনে অনেক বেড়িয়েচি, এখনও বেড়াই-পকা Base* টাইপ ন্তিমনেক দেখোঁচি, যথাসস্থানে তাদের গল্প করবো। f