পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেয়েটিকে ডেকে সেখানা তার হাতে দিয়ে বললাম।-এখানা পড়ে তুমি । নীরদ পিতাপত্রেীর অলক্ষিতে আমার গায়ে একবার চিমটি কাটলে। আমার তখন বয়স তোইশের বেশি নয়-মেয়েটি চৌদ্দ বছরের। মেয়েটি আমার হাত থেকে সেখানা নিয়ে নম্নমাখে একটি হাসলে। তারপর আমাদের থালা ও কাপগলি নিয়ে চলে গেল। গরমশায় উচ্ছসিত হয়ে বলেন-বইখানা দিয়ে দিলেন ? বেশ ভালো নতুন বইখানা-আমন বই ও পেয়ে বড় খশী হয়েচে। এ গাঁয়ে ওসব কে দেবে বলনে ? আমরা গরমশায়ের বাড়ি থেকে যখন বার হয়ে পথে পড়লাম তখন বেশ অন্ধকার হয়েচে, বাড়ির সামনে বাতাবী লেব, গাছের ডালে জোনাকি জৰলচে। গরমশায় বললেন-চলন আপনাদের এগিয়ে দিই। ট্রেনের এখনো দেরি আছে-সাড়ে আটটায় -আমাদের আন্ডাটা দেখে যাবেন না একবার ঠি কলকাতায় ক্লাব আছে, সিনেমা আছে, ফটবল আছে, এখানে লোকে অবসর সময় কি করে কাটায় জানিবার আগ্রহ অত্যন্ত বেশি ছিল আমার। একটা নীচু চালাঘরের সামনে গিয়ে গরমশায় বললেন-দেখবেন নাকি ? আসন না ? ঘরের মাটির মেঝেতে আগাগোড়া মাদর পাতা। জনচারেক লোক বসে আছে মাদরের ওপর, একজন হকোতে তামাক টানচে। আর তিনজন লোক একেবারে চুপচাপ বসে। আশচয্য এই যে, এরা কথাবাৰ্ত্তা বলতে এসে এমনধারা চুপচাপ বসে আছে ! একজন আমার দিকে চেয়ে বললে-কোথেকে আসা হচ্চে 2 গরমশায় বললেন-ওরা কলকাতা থেকে এসেচেন আমাদের দেশ দেখতে, তাই VTo go --বেশ বেশ, বসন ৷ তামাক চলে ? চলে না। তা বেশকথাবাত্তার ইতি। এ মজলিসে কেউ কথা বলে না দেখচি। আরও তিন-চারজন লোক ঢািকলো--একজন বললে—তে তুল কি দরে বিক্রি করলে চক্কোত্তি ? যে লোকটি হাকো টােনছিল সে উত্তর দিলে-বিক্লিক করিনি। সাড়ে সাত টাকা পৰ্য্যন্ত উঠলো, আর উঠলো না। সামনের হাটে আবার দেখি বেশ লাগলো। ওদের এই গ্ৰাম্য কথা। কথাও যদি বলে তো বেশ লাগে। এ যেন কাশমীর ভ্রমণের চেয়েও কৌতহলপ্রদ ; যদিও কখনো কাশমীর ভ্ৰমণ করিনি, বলতে পারিনে তার আনন্দ কি ধরনের। আর একজন বললে—আর একবার কুতুবপরে যাই, মেয়েটার একটা সম্পবদ্ধ জন্টেচে-পাত্র কুতুবপরের কাছারিতে নায়েবি করে -কুতুবপরের নায়েব ? হাঁ হাঁ, দেখে এসো, বেশ ছেলেটি, বিয়েস বেশি নাএই সময় একজন ঘরে ঢাকে সকলের সামনে কলার পাতায় মোড়া কি একটা জিনিস রাখলে। সবাই ঝাঁকে পড়লো। এসো হরিশ, কি, কি হে এতে ? আগন্তুক লোকটি হাসিমখে বললে-খাও না, দ্যাখো না কি। বাড়ির গাছে কথাবেল পেকেছিল, তারই আচার-বলি, যাই আন্ডার জন্যে একটা নিয়ে যাই— সকলেই ঝাঁকে পড়লো কলার পাতার ওপর। আমাদের হাতেও ওবা একটি তুলে দিলে জিনিসটা। আমাদের কোন আপত্তি টিকলো না। বেশ আন্ডা। খব ভালো লাগলো। আমার। আমি ভাবলাম কাছে এত, মাঝে মাঝে এক আধা শনিবার কলকাতা থেকে এখানে এসে এই আন্ডায় যোগ দিয়ে গেলে কলকাতা বাসের একঘেয়েমিটা কেটে যায়। কলকাতায় ফেরবার ট্রেনের সময় প্রায় হল। আমরা