পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পায়ে হোটে বাংলায় অনেক গ্রামেই ঘরেচি, সন্বত্রই দেখোঁচ সমান অবস্থাভদ্রলোকের পতন, মসলমান ও অনান্নত জাতির অভু্যুদয়। ভদ্রলোকের পাড়ায় ভঞ্জন অট্টালিকা, মজাপাকুর, ভগন দেবালয়, ঘন বনজঙ্গল-আর চাষাপাড়ায় ক্ষেতভরা তরিতরকারি, গোয়ালভরা গোর, ধানের মরাই, ছাগল, ভেড়া, হাঁস ইত্যাদি গহপালিত পশপক্ষীর পাল। হলফ নিয়ে অবিশ্যি বলতে পারব না যে সব চাষারই এই অবস্থা-তবে অনেকেরই বটে। ভদ্রলোকদের মধ্যে সাধারণত যারা শিক্ষিত ও উপাজনক্ষম, তারা থাকে বিদেশে শহরে, আর ঝড়তি-পড়তি মাল যেগলি, তারা নিরপোয় অবস্থায় পড়ে থাকে গ্রামে, শিক্ষিত ও প্রবাসী জ্ঞাতিদের পরিত্যন্ত বাড়ি-ঘরে । এরা বেলা বারোটা পর্যন্ত কোনো গাছতলায় কি কারো বাড়ির চন্ডীমণডপে বসে তামাক টানে আর বাজে গলপ ও পরিচর্চা করে, সন্ধ্যাবেলা বসে তাস খেলে, কিংবা শখের যাত্রার দলে আখড়া দেয়। এ অঞ্চলে থিয়েটর বড় একটা দেখিনি কোথাওওটা হল কলকাতা-ঘেষা জায়গার ব্যাপার । এই সব ভদ্রবংশের লোকের না আছে খাটবার ক্ষমতা, না আছে উদ্যম-উৎসাহ কোনো কাজে । কোনো নবাগত উৎসাহী লোক জনহিতকর কোনো কাজ করতে চাইলে এরা তাদের বঝিয়ে দেবে যে ও রকম অনেক হয়ে গেছে, ও করে কোন লাভ নেই। কুড়ে লোকেরা সব্বজ্ঞ হয়। সাধারণত । শাধ সদরপর নয়, অন্যান্য গ্রামেও ঠিক এই রকম দেখোঁচি এবং পল্লীগ্রামের ভবিষ্যৎ ভেবে হতাশ হয়েচি। আর পঞ্চাশ বছর এইভাবে চললে, গ্রাম থেকে উচ্চবর্ণের "হিন্দ নিশিচহ্ন হয়ে যাবে—এখনই যেতে শার করেচে। সন্দরপর ছাড়িয়ে একটা বড় বাঁওড় পড়লো সামনে, নদীর মতো চওড়া, জলও বেশ স্বচ্ছ, পার হবো কি করে বক্যতে পারাচি নে, এমন সময়ে একটি বামধার সঙ্গে দেখা হল। সে নীচু হয়ে জলের ধারের কলমির বন থেকে কচি কলমি শাক তুলে उाँ बाँक्षछिका। জিগ্যেস করতেই সে হাত তুলে দেখিয়ে বললে--সামনে দিয়ে যাও বাবা, ওইন্দিকি আগাড় পড়বে। বাঁওড়ের আগাড় মানে বাঁওড়ের একদিকের প্রান্তসীমা, যেখানে গিয়ে বাঁওড় শকিয়ে বা মাজে শেষ হয়ে গেলা-সতরাং ঘরে পার হওয়া যায়। সেখানটাতে। আধ মাইলের কিছু বেশি যেতে আগাড় দেখা গেল - সেখানে একটা বড় বট গাছের তলায় কি একটা হচ্চে দেখতে পেলাম। কাছে গিয়ে দেখি ওপারে বাঁওড়ের ধারে একটা বট গাছের তলায় কারা কলের গান বাজাচে, আর তাই শনিবার লোভে প্রায় পঞ্চাশ-ষাটটি ছেলে মেয়ে ঝি। বৌ একত্র জড় হয়েচে । বাঁওড়ের ঘাটে জল নিতে এসে বউয়েরা শনিচে, সবই চাষা লোক, এ সব গ্রামে ভদ্রলোকের বাস আদৌ নেই। বেলা প্রায় একটা হবে। আমিও একটা বিশ্রাম করে নেবার জন্যে বটতলার ছায়ায় গিয়ে বসলাম। কলের-গানওয়ালারা গাছের উচু শেকড়ের ওপর বসেচে, আমায় ভদ্রলোক দেখে ওরা লাজক মাখে আমার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখলে। সস্তা খেলো গ্রামোফোনের টিনের লক্ষবা চোঙের মািখ দিয়ে ককাশ, উচ্চ, অস্বাভাবিক ধরনের গলার আওয়াজ বেরচে। বাজে হালকা সরের গান বা ভাঁড়ামির রেকড সবই-আমি জিজ্ঞেস করলাম-তোমাদের ভালো কিছ আছে ? SR