পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভেবেছিলাম দেখবো, কিন্তু সময়ের অভাবে হয়ে উঠলো না। পথে পড়ে গেলাম বিপদে, ট্রেনের যে কামরায় উঠোঁচি সে কামরায় আর দজন বপদকধারী সেপাই টাকার থলে পাহারা দিয়ে কোথায় যেন নিয়ে যাচে। আমাকে ওরা প্রথমে বারণ করেছিল। সে গাড়িতে উঠতে। কিন্তু গাড়িতে বেজায় ভিড় ছিল বলে আমাকে বাধ্য হয়ে ওদের কামরায় উঠতে হল। গাড়ি তো ছাড়লোমাঝরাস্তায় তারা কি বলাবলি করল। একজন চলন্ত গাড়ির ওদিকের দরজা খািললে—আর একজন আমার হাত ধরে টানতে লাগলো-ওরা গাড়ি থেকে আমায় 4FCब्ज 64द । আমি প্রথমটা ওদের মতলব কিছ বঝতে পারিনি। কারণ এ ধরনের ব্যাপার ধারণা করা শক্ত—আমি নিরীহ রেলযাত্রী, আমাকে তারা কেন ফেলে দেবে, এর ব্যক্তিসঙ্গত কারণও তো একটা খাঁজে পাইনে। ওদের অভিসন্ধি সম্পবন্ধে আমার প্রথম সন্দেহ হল গাড়ির ওদিকের দরজা খািলতে এবং সঙ্গে সঙ্গে আমাকে হাত ধরে টানতে। যখন ওদের সঙ্গে জোরে পারবো না বেশ বঝলাম--তখন আর একটা সেন্টশনে না। আসা পয্যন্ত যে ভাবেই হোক আমায় রেলগাড়ির মধ্যে থাকতে হবে। আমি ওদের বললাম-কেন তোমরা আমাকে এ রকম করচো ? ওরা সে কথার কোনো জবাব দেয় না, শধ হাত ধরে টানে। ওরা সে রাত্রে আমায় নিশ্চয়ই ফেলে দিতো-কিন্তু ওদের প্রধান অসবিধে দাঁড়ালো গাড়ির দরজাটা । দরজা যদি বাইরের দিকে খোলা থাকতো। তবে দজনে মিলে ঠেলতে পারতো বা ওই রকম কিছ। কিন্তু এটা ভিতর দিকে খোলা যায়, সেই ধরনের দরজা। গাড়ির ঝাঁকুনিতে সেটা কেবল কুপ ঝুপ করে বন্ধ হয়ে যাচ্চে-সতরাং একজনকে ধরে থাকার দরকার সেটাকে । আমি ওদের সঙ্গে কোনো চোচামেচি কি গোলমাল করাচিনে-মাথা অনেকটা ঠান্ডা করে রেখেচি, কারণ আমার মনে হল ক্ৰমে যে এরা মাতাল হয়েচে—এরা কি করচে এদের জ্ঞান নেই। ঝগড়া কি চোঁচামেচি করলে মাতাল অবস্থায় রেগে চাই কি আমায় গলি করেও বসতে পারে। ট্রেনের বেগও কমে না, কোনো সেন্টশনেও আসে না। শেকল টানবার উপায় নেই – কারণ যে দরজা দিয়ে তারা আমায় ফেলে দেবে, শেকল টানতে গেলে তো সেই দরজার কাছেই যেতে হয়-দরজার মাথার ওপর শেকল টানার হাতল । আমি ওদের ক্ৰমাগত বোঝাবার চেন্টা করচি, একজনকে মেরে ফেলে তাদের লাভ কিছ নেই—বরং তাতে পলিসের ভীষণ হাঙ্গামে পড়ে যেতে হবে। তা ছাড়া নরহত্যা মহাপাপ, রামচন্দ্রজি ওতে যে রকম চটেন অমন আর কিছতেই চটেন না। সবগে যাবার অত বড় বাধা আর নেই। তুলসীদাসের দোঁহা এক-আধটা মনে অনিবার চেষ্টা করলাম--কারণ "রামচরিতমানস’ আমার পড়া ছিল—কিন্তু বিপদের সময় ছাই কি কিছ মনে আসে! এমন সময়ে গাড়ির বেগ কমে এল-কোনো এক সেন্টশনে আসচে। এতক্ষণ পরে। মাঠের মধ্যে গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল, সামনেই কি সেন্টশন, লাইন ক্লিয়ার দেওয়া নেই সিগন্যালে। গাড়ি দাঁড়াবার সঙ্গে সঙ্গে ওরা আমায় ছেড়ে দিলে। আমিও একটি কথাও বললাম না। মাতালকে চটিয়ে কোনো লাভ নেই। পরের স্টেশনে গাড়ি দাঁড়ালো একটি পরেই। আমি আমার জিনিসপত্র সামান্য যা ছিল, নিয়ে অন্য কামরায় চলে গেলাম। রাত। তখন এগারোটা কি তার বেশি। Sy