পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করে বসে আছে, মানষের পায়ের শব্দ পেলে তাড়াতাড়ি গাত্তের মধ্যে ঢকে পড়ে। ধবোধ হয় ঘণ্টাখানেক কেটে থাকবে—এমন সময় সামপানের মাঝি বললে-বাবা, শীগগির নৌকোয় উঠে বসন-জোয়ার আসচে! ওর গলায় ভয়ের সর। বিস্মিত হয়ে বললাম-কেন, কি হয়েচে ? মাঝি বললে-সোনাদিয়া দাবীপ জোয়ারের সময় ড্যুবে যায়-সাঁতার জানলেও অনেকে ডুবে মরেচে। একটি তাড়াতাড়ি করন কত্তা। বলে কি! শেষকালে বেঘোরে ডুবে মরতে রাজি নই! একটা বেশি তাড়াতাড়ি করেই সামপানে উঠলাম। বড় বড় ঢেউ সোনাদিয়া চড়ায় আছাড় খেয়ে পড়তে লাগলো-তার আগেই আমরা চড়া থেকে দরে চলে এসেচি। কিন্তু যে ঘটনার কথা বলতে যাচ্চি, সেটা ঘটলো এর ঠিক পরেই-জোয়ারে ডুবে মরবার সম্পভাবনার চেয়ে সেটা কম বিপদজনক নয়। খানিক দর এসে সমদ্রের মধ্যে কুয়াশা নামলো। কোনোদিক দেখা যায় না, বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুন্ডলা'র কুয়াশার বর্ণনা মনে পড়লো। কুয়াশা এমন ঘন যে অত বড় আদিনাথ পাহাড়টা বেমালাম আব্দশ্য হয়ে পড়েচে। মাঝে মাঝে সামপানের দাঁড় ফেলার সময় যে ঢেউয়ের সন্টি হচ্চে তার মধ্যে অসংখ্য জোনাকি পোকার মতো কি জীবলে উঠচে-বসে বসে লক্ষ্য করাচি অনেকক্ষণ থেকে। সমদ্রের আলোকোৎক্ষেপী উৰ্ম্মিমালার কথা বইতেই পড়েছিলাম। এর আগে, এইবার চোখে দেখলাম। ঘণ্টাখানেক সাম্যপান চলেচে-কালের দেখা নেই। মাঝি কখনো বলে, ওই সামনে ডাঙ্গা দেখা যাচ্চে-কখনো বলে, আদিনাথ পাহাড়ের দিকে গিয়ে পড়ােচ । আমার ভয় হল সে দিক ভুলে আদিনাথ পাহাড়ের দিকেই যাচ্চে - আদিনাথের নীচে সমাদের মধ্যে দা চারটি মঞ্চনশৈল থাকা অসম্পভব নয় ; তাতে ধাক্কা মারলে সাম্যপান চর্ণ বিচােৰ্ণ হয়ে যেতে বেশি দেরি লাগবে না। যদি বারসম দ্ৰে পড়ি দিক ভুল হয়ে, তবে বিপদ আরও বেশি। একবার কাগজে পড়েছিলাম, সন্দরবনের কি একটা জায়গা থেকে কয়েকটি লোক একখানা ডিঙি নৌকো করে কোন দ্বীপে কুমড়ো আনতে যায়। ফিরবার পথে তারা দিক ভুল করে বারসম্যুদ্রে গিয়ে পড়ে-সমন্দ্রে কি করে নৌকো চালাতে হয় তাদের তা জানা ছিল না—এগারো দিন পরে ব্ৰহ্মদেশের উপকালে যখন তাদের ডিঙি গিয়ে ভাসতে ভাসতে ভিড়লো তখন মাত্র একজন জীবিত আছে। এ সময় হঠাৎ সে কথাটাও মনে পড়লো। মাখিও যেন একটা বিপন্ন হয়ে পড়েচে। সে বললে-বাব, আপনার কাছে দেশলাই আছে ? সামপানে মশাল আছে, একটা ধরিয়ে নিই। তাকে বললাম, মশাল কি হবে ? —মশাল জৰােলা দেখে অন্য নৌকো কি সন্টীমার আমাদের পাবে। একটা বিপদ আছে বাবা, এই পথ দিয়ে বড় জাহাজ রেঙ্গনে কি মংড থেকে চাটগাঁ যায়—কুয়াশার মধ্যে যদি ধাক্কা লাগে। তবে তো সাম্যপান ডাবে যাবে-আর একটা বিপদ বাবা, মাঝে “মাঝে বয়া আছে সমদ্রের মধ্যে, তাদের মাথায় আলো জািৰলে-যদি কুয়াশার মধ্যে আলো টের না পাই। তবে বয়ার গায়েও ধাক্কা লাগতে পারে —ঠিক সেই কারণে তো আমাদের মশালও না দেখা যেতে পারে অন্য নৌকো। বা সটীমার থেকে ? মাঝি সে কথার কোনো উত্তর দিলে না। আমি দেশলাই বার করে মাঝির হাতে দিতে যাবো, এমন সময় কি একটা শব্দে চমকিত হয়ে বলে উঠলাম-কিসের শব্দব SRIf