পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

आदि ? মাঝির গলার সাের ভয়ে বিকৃত হয়ে উঠেচে-সে বলে উঠলো, বাবা, সামপানের কাঠ আকড়ে ধরন জোর করে--সামনে পাহাড় একমহন্তে বঝে ফেললাম। আমাদের সঙ্কটের গােরন্থ। সামনে আদিনাথ পাহাড়, দিক ভুল করে মাঝি সাম্যপান নিয়ে এসেচে। উত্তর-পত্বি দিকে-কিছই চোখে দেখা যায় না, শধ সাগরের ঢেউ পাহাড়ের গায়ে আছড়ানোর শব্দে বোখা যায় যে পাহাড় নিকটবত্তীর্ণ। কিন্তু আরও দশ মিনিট কেটে গেল। পাহাড়ের গায়ে ঢেউয়ের শব্দ তখনও সামনের দিকে, কিন্তু সাম্যপান যেন সে শব্দকে ছাড়িয়ে আরও উত্তরে চলে बा65छ । ব্যাপার কি! মাঝিও কিছ বলতে পারে না। হঠাৎ আমার মনে হল ঠিক সামনেই কাউখালি নদী সমদ্রে পড়াচে ; কুয়াশা তখনও খব ঘন, এসব কুয়াশা ক্ৰমে ক্ৰমে পাতলা হয় না, অতকিতে এক মহত্তে চলে যাবে t আমি মাঝিকে বললাম--মাঝি, নদীর মোহানা সামনে মাঝি বললে-বাব, ও কাউখালি নয়, আদিনাথের ঝরনা, কুয়াশার মধ্যে ওই রকম দেখাচ্ছে, আমরা উত্তর দিকে যাচ্চি ভেসে। এ জায়গাটা আরও ভয়ানক।-- মাঝি আমাকে যাই বলক, ভয়ের চেয়ে একধরনের অদভুত আনন্দই বেশি করে দেখা দিয়েচে মনে। সমদ্রে দিক হারা হয়ে সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়বো এ তো বাল্যকালের স্বপন ছিল ; নাই বা হল খাব বেশি দর- মাত্র চট্টগ্রামের উপকাল-সমােন্দ্র, সব জায়গাতেই সমদ্র, মাথার ওপরকার আকাশ সব জায়গাতেই নীল, কলপনা। সব্বত্ৰেই নীল, কলপনা। সব্বত্রই মনে আনে নেশার ঘোর। কিন্তু আমার আদলেট বেশি ঘটলো না। আদিনাথের নীচে কয়েকখানা জেলেডিঙি বাঁধা, আমাদের সামপানের আলো দেখতে পেয়েছিল। তাদের লোক মাঝিকে ডাক দিয়ে কি বললে, সেখানে অতি সহজেই আমাদের নৌকো ভিড়লো। আরও আধা ঘণ্টা পরে কুয়াশা কেটে গেল। সেই জ্যোৎস্নালোকিত সমদ্রবক্ষে সামপান ছেড়ে আমরা এসে পৌছলাম কাউখালি মোহানায়। দারের সমদ্র স্থির নিস্তরঙ্গ, তটভূমির ঝাউয়ের সারির মধ্যে নৈশ বাতাসের মৰ্ম্মরধবনি ; বড় বড় ঢেউ যখন এসে ডাঙায় আছড়ে পড়চে, তখন তাদের মাথায় যেন অসংখ্য জোনাকি জবলচে । কক্সবাজার থেকে গেলাম মংড। 'নীলা” বলে একখানা ছোট সন্টীমার চাটগাঁ থেকে কক্সবাজারে আসে, সেখানা প্রতি শক্ৰবারে তখন মংড পৰ্যন্ত যেতো। শটকি মাছ সন্টীমারের খোলে বোঝাই না। থাকলে এ সব ছোট জাহাজের ডেকে যাওয়া অত্যন্ত আনন্দদায়ক। উপকােল অাঁকড়ে জাহাজ চলে, সতরাং একদিকে সব সময়েই সবজি বনশ্রেণী, মেঘমালা, জেলেডিঙির সারি, কাঠের বাড়ি, বৌদ্ধমন্দির, মাঝে মাঝে ছোট নদীর মােখ, কখনো রৌদ্র কখনো মেঘের ছায়া-যেন মনে হয় সব মিলিয়ে সন্দের একখানি ছবি। কিছদরে গিয়ে খানিকটা ফাঁকা জায়গা। সেখানে কিসের কারখানা আছে, চর থেকে কলের চিমনির ধোঁয়া উড়চে দেখা যায়। সন্টীমারের লোকে বললে—করাতের কল, বনের কাঠ চিরে ওখান থেকে জাহাজে বিদেশে রওনা করা হয়। বিকেলে মংডতে সন্টীমার ভিড়লো। মংড একেবারে ব্ৰহ্মদেশ। সেখানে পা দিয়েই মনে হল বাংলাদেশ ছাড়িয়ে এসেচি। বাল্মী মেয়েরা মোটা মোটা এক হাত লম্বা চারটি মাখে দিয়ে জল আনতে যাচ্চে, টকটকে লাল রেশমী লঙি পরা যােবকেরা Rఏ