পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাইকেলে চড়ে সতেজে চলাফেরা করচে, পথের ধারে এক এক জায়গায় ছোট ছোট চালাঘর, সেখানে পথিকদের জলপানের জন্যে এক কলসী করে জল রাখা আছে। এখানে একটি ব্ৰহ্মদেশীয় পরিবারের সঙ্গে আমার আলাপ হয়ে যায় খাব অদ্ভুত ভাবে। একদিন মংডর পরেনো পোস্টাপিসের পেছনের রাস্তা দিয়ে সমদ্রের ধারে করে একটা কাজ করে দেবেন, একখানা দরখাস্ত লিখে দেবেন। ইংরেজিতে : তারপর আমাকে সে একটি টিনের বাংলো ঘরে নিয়ে গেল। বাংলোর ভেতরটাতে কারা আছে তখন জানতুম না, বাইরের একসারি ছোট ঘরে অনেকগলো জাহাজী মাল্লা বাসা করে আছে বলে মনে হল। আমার হাতে তখন পয়সার সচ্ছলতা নেই, দরখাস্ত লিখতে ওরা আট আনা পারিশ্রমিক দিলে, আমিও তা নিয়েছিলাম। দরখাস্ত লিখে চলে আসচি, এমন সময়ে সেই বন্ধ মাল্লাটি বললে, বাবা, ওই বশমী সাহেব আপনাকে ডাকচে, ভেতরের ঘরে থাকে ওরা। আমি অবাক হয়ে গেলাম। অপরিচিত স্থানে যেতে মন সরল না, কি জানি কার মনে কি আছে! কিছশক্ষণ পরে একটি বন্ধ বক্রমী ভদ্রলোক আমায় হাসিমখে বাঁকা চাটগায়ের বলিতে বললেন ।--আসন বাব, আপনাকে একটা দরকার আছে। যে ঘরে তিনি আমায় নিয়ে গেলেন, সে ঘরে তিন-চারটি সংবেশ তরণী বসে ছিলেন, সকলেই দেখতে বেশ সশ্রী। প্রত্যেকের সামনে একটা ছোট বাটি, তাতে সাদা মতো কি গড়ো, একটা ঢাকেই চোখে পড়লো ; ভদ্রতাবিরািন্ধ হয় বলে আমি আর ওঁদের দিকে চাইনি। ভদ্রলোক আমায় বাংলায় বললেন-- একট চা খাবেন ? আমার বিসময়ের ভাব তখনও কাটেনি, আমি কোনো উত্তর দেবার আগেই মেয়েরা ঘর থেকে বার হয়ে গেলেন। বদ্ধ বললেন, আপনাকে ডেকেচি কেন বলি। আমি কাঠের ব্যবসা করি, বাজারে আমার কাঠের আড়ৎ আছে। একজন বাঙালী বাব আমার আড়াতে ইংরিজি চিঠিপত্র লিখতো আর আমার মেয়ে-তিনটিকে ইংরিজি পড়াতো, সে চলে গিয়েচে আজ দ-মাস। আর আসে না, চিঠি লিখলে জবাব দেয় না, অথচ আমার জরীরী চিঠি দ-তিনখানার উত্তর না দিলে নয়। আপনি মোবারক খালাসির দরখাস্ত লিখছিলেন শানে আপনাকে ডাকলাম। যদি দয়া করে লিখে দেন, আপনার উপযন্ত পারিশ্রমিক যা হয়। আমি দেহের । আমি আনন্দের সঙ্গে রাজি হলাম। আমি যে কদিন এখানে থাকবো, তিনি আমায় দিয়ে তাঁর চিঠি লিখিয়ে নিতে পারেন। যা ইচ্ছে হয় দেবেন, সে বিষয়ে আমার কিছ: বস্তুবা নেই। একটা পরে ওঁর মেয়েরা চা নিয়ে এলেন। ভদ্রলোক আমার সঙ্গে মেয়েদের আলাপ করিয়ে দিলেন, সকলেই বাংলা বলতে পারেন বটে। কিন্তু তাঁদের বাংলা বোঝা আমার পক্ষে বড় কািন্টকর হয়ে উঠছিল প্রতিবার। কথাটা তাঁদের বিনীত ভাবে বঝিয়ে বললাম। আমার বাড়ি কলকাতায়, চট্টগ্রামের ভাষা ভাল বঝি না, তার ওপরে বিকৃত চট্টগ্রামের বলি তো আমার পক্ষে একেবারেই দৰে বাধ্য। ইংরিজিতে যদি বলেন তবে আমার সবিধে হয়। বদ্ধ ভদ্রলোককে কথাগালি বললাম বটে, কিন্তু মেয়েদের উদ্দেশ করে। মেয়েরা আমার বাংলা বোঝেন না, তাঁদের বাবা বম্পিমজি ভাষায় বঝিয়ে দিলেন আমার বক্তব্য। আমি বাটিতে সাদা গড়ো দেখিয়ে বললাম-ওটা কি কোনো খাবার জিনিস ? মেয়েরা ভদ্রতার খাতিরে অতি কন্টে হাসি চেপে গেলেন, বঝলাম তাঁদের পর VO